এক ভয়ানক অনুজীবের দৌরাত্ম্যে থরহরি কম্প গোটা দেশ তথা পৃথিবী জুড়ে। বহু ধরণের, বহু রকমের, বহু গুনের। তাদের কেউ কেউ করোনার মতো প্রাণঘাতী হলেও কেউ আবার আপাত নিরীহ ভদ্রলোক।কেউ কেউ আবার দারুণ উপকারীও বটে।
এবার এরকমই এক নতুন অনুজীবের কথা জানালেন বাঙালি বৈজ্ঞানিক কৌশিক মজুমদার। এই ক্ষুদে ব্যাকটেরিয়াটিকে বছর ছয়েক আগে খুঁজে পেলেও এদিন তিনি তাঁর স্যোশাল মিডিয়ায় প্রথমবার লেখেন তাঁর এই আবিষ্কারের কথা। বলতে গেলে এক্কেবারে অপ্রত্যাশিত ভাবেই কৌশিকবাবু আবিষ্কার করে ফেলেন এই ব্যাকটেরিয়াটিকে। ২০০৫ সালে ধান ক্ষেতের মাটি থেকে তিনি হঠাৎ করেই খুঁজে পান ব্যাকটেরিয়ার এক দলকে। ১২ ধরণের ব্যাসিলাস প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, তার মধ্যে এই ব্যাক্টেরিয়াই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।
বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ” ২০০৫ সালে কিছু ধান গাছের গোড়ার মাটি থেকে এঁদের খুঁজে বার করেছিলাম। ইনি একা নন, এর মত ১২ প্রজাতি। তবে ইনিই সবচেয়ে জবরদস্ত ফাইটার। এর ক্রমিক নম্বর ছিল ৫। দেখতে রডের মত। লম্বায় ৩-৪ মাইক্রন, চওড়ায় ০.৮ থেকে ১ মাইক্রন। ” কিন্তু কীভাবে হল এই আবিষ্কার? এই প্রসঙ্গে কৌশিকবাবু জানান “ইনি আসলে কে? নাম কি? খুঁজতে গিয়ে দেখি ওমা! এর খবর তো কোথাও নেই! কোন রেশন কার্ড, আধার কার্ডে নাম নথিভুক্ত করা হয়নি। বিজ্ঞান জগতে ইনি একেবারেই অপরিচিত। কিন্তু তা বললে কি চলে? ফলে ব্যাসিলাস প্রজাতির এই নতুন ব্যাকটেরিয়াটার নাম নিজের নামেই দিয়েছিলাম।” আজ্ঞে হ্যাঁ, তরুণ এই বাঙালি বিজ্ঞানীর আবিস্কৃত এই ব্যাকটেরিয়াটির নাম তাঁর নামেই। শখ করে নিজের আবিস্কৃত ক্ষুদেটির নাম তিনি রেখেছেন ‘Bacillus sp. KM5’। বলাই বাহুল্য এই ব্যাকটেরিয়ার পেটেন্টও রয়েছে বিজ্ঞানীর।
আবিষ্কার তো হল, কিন্তু কেমন স্বভাব এই নতুন ব্যাকটেরিয়ার? করোনার মত এও ডেকে আনবে না তো কোনো নতুন বিপদ?
এব্যাপারে এক্কেবারেই অভয় দিয়েছেন কৌশিকবাবু। ক্ষতিকর তো নয়ই উলটে বরং প্রাণী এবং উদ্ভিদের পক্ষে উপকারীই এই KM5। এই ব্যাকটেরিয়া ধান গাছের মূলের ক্ষতিকর অনুজীব মারার সাথে সাথেই গম গাছের মূল ও কান্ডের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলেই ২০১৯ সালে প্রকাশিত এই সম্পর্কিত রিসার্চ পেপারে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী। কিন্তু কীভাবে? এই ব্যাকটেরিয়ার দেহ থেকে চার রকম পলিইন অ্যান্টিবায়োটিক আর এক রকম নন পলিইন অ্যান্টিবায়োটিক বার হয়, আর তাতেই গাছের যত অপকারী ছত্রাক আছে মারা যায় সবাই।
প্রসঙ্গত বলা ভালো যে, উত্তর ২৪ পরগনার অশোগনগর নিবাসী এই বৈজ্ঞানিক বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কৃষি রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত। বিজ্ঞানী হওয়ার সাথে সাথেই তিনি সুলেখকও বটে। তাঁর ঝুলিতে ব্যাকটেরিয়া নিয়ে লেখা ‘Discovering Friendly Bacteria : A Quest’ বইয়ের সাথে সাথেই আছে ‘নোলা’, ‘তোপসের নোটবুকের মত’ বেস্টসেলিং তালিকায় থাকা বইও। এবার অসাধারণ মেধার আপাত সাধারণ এই বঙ্গসন্তানের এহেন আবিষ্কার যে আরও একটি পালক যুক্ত করল বঙ্গের গর্ব মুকুটে সেকথা বলাই বাহুল্য।