হাথরাসের রতিভানপুরে ‘ভোলে বাবার সৎসঙ্গের’ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩৫ জন। আহত গণনাতিত। নিখোঁজ বহু। মঙ্গলবারের জমায়তে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলেই জানা গেছে। হতা-হতদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা ও মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের জেলাশাসক আশিসকুমার। মৃতদের প্রতি ২ লক্ষ ও আহতদের পরিবারের উদ্দেশে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা উত্তরপ্রদেশ সরকারের।
এটাহের এসএসপি রাজেশ কুমার সিং জানিয়েছেন, হাথরসের মুঘলাগড়ি গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে৷ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। দায়ের হয়েছে মামলাও। যে ধর্মগুরুর ডাকে এই সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেই সুরজ পাল ওরফে ভোলে বাবার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে যাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, সেই আর্জিই জানানো হয়েছে এই ঘটনার মামলায়।
এই ভোলে বাবা হলেন সন্ত নারায়ণ সাকার হরি। পশ্চিম ইউপিতে তিনি ধর্মপ্রচার করেন। একটা সময় পুলিশে কাজ করতেন, পরে সেই চাকরি ছেড়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ধর্মপ্রচার করতেন, পরে সৎসঙ্গ অনুষ্ঠিত করেন। যোগী সহ সমাজবাদি দলের অখিলেশ যাদবের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এই ভোলে বাবার।
জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে এই সৎসঙ্গের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হতেই সকলে মিলে ঠেলাঠেলি করে বের হতে গেলেই হয় সমস্যা। সেই সময়েই তাড়াহুড়োয় পদপিষ্টের ঘটনার সূত্রপাত। বাইরে সারি দিয়ে বাইক দাঁড়িয়ে থাকায় বেরোতে অসুবিধা হয়। অনেকে সামনে থাকা নালাতেও পড়ে যান।
জানা গেছে, হাথরাসের সিকান্দারা রাউ শহরে বিশেষভাবে তৈরি করা তাঁবুতে এক ধর্ম প্রচারক তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই ভোলে বাবার পায়ের ধূলি নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। মারাত্মক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক ভক্ত জমায়েত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। একজন আরেকজনের উপরে গিয়ে পড়ে। পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। হুড়োহুড়িতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সৎসঙ্গের আয়োজন করেছিল ‘মানব মঙ্গল মিলন সদভাবনা অনুষ্ঠান’ কমিটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরা বের হতে শুরু করে। সেই সময় ধাক্কাধাক্কি হয়। বের হওয়ার পথটি খুব সরু থাকার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আলিগড় রেঞ্জের ইন্সপেক্টর জেনারেল শলভ মাথুর বলেন, এটা ছিল ভোলে বাবা নামে এক ধর্ম প্রচারকের সৎসঙ্গ সভা। মঙ্গলবার বিকেলে এটাহ ও হাথরাস জেলার সীমান্তে জমায়েত হওয়ার জন্য সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়। আহতদের এটাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঠিক কীভাবে এমনটা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছেন।