৪৩ বছর ধরে পুরুষের ছদ্মবেশে সন্তানের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার লড়াই এই মিশরীয় নারীর । এম ভারত নিউজ

user
0 0
Read Time:4 Minute, 12 Second

আর কয়েকটা দিন পরেই আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস পালিত হবে বিশ্ব জুড়ে। তার আগে এই গল্প এক মায়ের অবিস্মরণীয় বীরত্বের, আত্মত্যাগের। মিশরের এক মহিলা তাঁর জীবনের ৪৩টি বছর কাটিয়েছেন পুরুষের ছদ্মবেশে। নাহ শখ করে বা যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য নয়, জীবন যুদ্ধে জেতার জন্য। সন্তানের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার জন্য। শেষমেষ জিতেও গেছেন তিনি। মিশরের লাক্সোর শহরে রাস্তার মোড়ে এখনো আপনি দেখা পেতেই পারেন এক বৃদ্ধের। এক মনে জুতো পালিশ করে চলেছেন তিনি। দেখে পুরুষ বলে মনে হলেও আদতে পুরুষ নন তিনি। তিনি একজন মহিলা, এক সন্তানের মা। তাঁর নাম সিসা আবু দাওয়াহ।

এই নাটকীয় গল্পের শুরুটা আজ থেকে প্রায় উনপঞ্চাশ বছর আগে। সিসার মাত্র ২২বছর বয়সে মারা যান তাঁর স্বামী। সিসা তখন গর্ভবতী। স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় অবস্থায় প্রায় দিশেহারা হয়ে তিনি বের হন রাস্তায়,কাজের খোঁজে। কিন্তু মিশরীয় সমাজ ব্যবস্থা তৎকালীন সময়ে পুরুষ অভিভাবক বিহীন একজন একা নারীকে কাজ করার অধিকার দিতনা। রান্নাবান্না এবং সন্তান প্রতিপালনই নারীর একমাত্র কাজ বলেই মনে করা হত। এত সব সামাজিক নিয়ম কাননের বেড়াজালে পড়ে কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না সিসা। অন্যদিকে আবার বিয়ে করার জন্য চাপ আসছিল পরিবার থেকেও। কিন্তু নিজে কিছু করে নিজের সন্তানকে বড় করতে চেয়েছিলেন সিসা। তাই শুধুমাত্র যাতে সহজে কাজ পেতে পারেন তাই জন্য একদিন তিনি কেটে ফেললেন নিজের সমস্ত চুল, পরতে শুরু করলেন পুরুষদের পোষাক। এর পর শুরু হল আরো হল লড়াই। বাড়ি তৈরির কাজ, জুতো পালিশ করার কাজ ইত্যাদি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত কঠিন কাজগুলিও করতে থাকলেন সিসা। শুধুমাত্র সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে বছরের পর বছর চলল সেই অদম্য জীবন সংগ্রাম। শুধু পোষাকই না, একজন পুরুষ হয়ে ওঠার জন্য সিসা বদলে ফেলেছিলেন নিজের কন্ঠস্বর থেকে শুরু করে কথা বলার ভঙ্গিও।

এমনকি তাঁর মেয়েও তাঁকে ডাকে ‘বাবা’ বলে। অবশেষে প্রায় ৪৩ বছর পর ২০১৫ সালে জানাজানি হয় তাঁর আসল পরিচয়। দেশজুড়ে দাবানলের মতন ছড়িয়ে পড়ে সেই খবর। তাঁকে “সবচেয়ে শক্তিশালী মা” এর খেতাব দেন মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। সিসার মেয়ে হাউদা জানান এখনো তাঁর মা’ই সংসারের প্রধান রোজগেরে। তিনি এখনও পুরুষের পোষাকেই জুতো পালিশ করেন রাস্তায় বসে, এই ৭১ বছর বয়সেও।

বদলেছে সময়,কিছুটা হলেও বদলেছে পরিস্থিতি। এখন কাজ করার অধিকার পাওয়ার জন্য মিশরে আর নিজের অস্তিত্বকে বদলে ফেলতে হয়না কোনো নারীকে। তবুও এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সিসার মতন নারীদের লড়াই যেন অনুপ্রেরণা যোগায় গোটা বিশ্বকে। শেখায় হার না মানতে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
100 %

Leave a Reply

Next Post

গৌতম গম্ভীর ফাউন্ডেশনে এক কোটি টাকার অনুদান অক্ষয়ের । এম ভারত নিউজ

করোনা পরিস্থিতিতে নাজেহাল গোটা বিশ্ব ,এরই মাঝে আবারও একবার নিজের মহানতা এবং উদারতার পরিচয় দিয়ে গৌতম গম্ভীর ফাউন্ডেশনে এক কোটি টাকার অনুদান দিলেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা অক্ষয় কুমার। এইকথা, গতকাল শনিবার টুইট করে জানালেন গৌতম গম্ভীর নিজেই। অক্ষয় কুমারের কাছ থেকে এই পরিস্থিতিতে এরূপ আর্থিক সাহায্য পেয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে […]

Subscribe US Now

error: Content Protected