নদিয়ার গোড়ভাঙ্গা গ্রাম এখন উৎসবের মেজাজে। কারণ এই গ্রামে এখন চলছে সম্প্রীতির মিলন উৎসব- ‘আজাহার ফকিরের অমর মেলা’। আজাহার ফকির হলেন বাংলার বাউল তথা ফকিরি গানের জগতের অন্যতম শেষ্ঠ শিল্পী মনসুর ফকির সাহেবের বাবা। আর তাঁর স্মরণেই মনসুর ফকিরের নিজস্ব আশ্রম ‘গোড়ভাঙ্গা জনকল্যাণ সেবাশ্রম’ এই মেলার আয়োজন করেছে। এ’বছর এই মেলা পা দিল ২৪ তম বর্ষে। নানান ব্যস্ততার মাঝেও মনসুর সাহেব আতিথেয়তার ত্রুটি রাখেননি। তাঁর আশ্রমে আসা সমস্ত ভক্তকে তিনি যেমন ভাবে গান গেয়ে শোনাচ্ছেন ঠিক তেমন ভাবেই একসঙ্গে বসে মেতেছেন আড্ডাতেও। আশ্রমে রয়েছে পাত পেড়ে প্রসাদ খাওয়ার ব্যবস্থাও। আসল ফকিরি গানের আসর আর আখড়া কাকে বলে তা বোধয় এই আশ্রমে এলে চাক্ষুষ করা যায়। পাশাপাশি নিজের প্রত্যেকটা গানের মানেও বুঝিয়ে দিচ্ছেন মনসুর সাহেব।
বাবা আজাহার ফকিরের সমাধিকে ঘিরেই মনসুর ফকিরের আখড়া। প্রতি বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি আজাহার ফকিরের জন্মদিন উপলক্ষে মেলা বসে এই গ্রামে। এ বছরও তার অন্যথা হল না। একেবারে জাঁকজমক ভাবে মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার অন্যতম আকর্ষণ তেলেভাজা, পাঁপড়, ঘুগনি, ডিমভাজা, চা-কফির সঙ্গে মন ভোলানো গানের অনুষ্ঠান। জেলা ছাড়িয়ে গোটা বাংলা এমনকি বাইরে থেকেও প্রচুর বিশিষ্ট শিল্পীরা আসছেন এই মেলায় অংশ নিতে। প্রতিদিনই বিশিষ্ট শিল্পীদের নিয়ে আসর বসছে এই মেলায়। মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে উৎসবের আমেজ। বাবা আজাহার ফকিরের নামে আশ্রম করেছেন মনসুর ফকির। ১৯৯৯ তে প্রথম এই মেলার সূচনা করেন মনসুর সাহেব। মেলার ক’টা দিন নাচে-গানে জমে ওঠে এই আশ্রম চত্বর।
লালন পীঠস্থান নদিয়া জেলার গ্রাম, গোড়ভাঙ্গা। এ এক অনন্য, অসাধারণ গ্রাম। জমজমাট ফকিরি আখড়ায় মেতে ওঠেন গ্রামবাসী। দ্বাদশ শতকে বেশ কয়েকটি পাঠান পরিবার আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসে বসতি স্থাপন করে। তার মধ্যে একটি এসেছিল মালদহের গৌড়ে। মহাপ্রভুর সময়কালে সেই পরিবারের সদস্যরাই গৌড় থেকে আসেন নদিয়ায়। সেই থেকেই গ্রামের নাম গৌড়ভাঙা, কালক্রমে যা হয়ে গিয়েছে গোড়ভাঙ্গা। আর এই গোড়ভাঙ্গা গ্রামই যেন মনসুর ফকিরের প্রাণ-পরিবার। তাই তো মনসুর ফকিরের টানে আর গানের টানে বার বার ভক্তরা ফিরে আসেন এই গ্রামে, এই আশ্রমে।