ঋতুহারা বাঙালির মননে আজও অটুট ঋতুপর্ণর স্মৃতি । এম ভারত নিউজ

user
0 0
Read Time:5 Minute, 30 Second

লোকটা যেন কেমন! ছেলেও না আবার মেয়েও না। অদ্ভুত সব পোশাক পড়ে আর মেয়েলি কণ্ঠস্বর। কিন্তু বেড়ে সিনেমা বানায়! বাংলার সিনেপ্রেমীদের কাছে ঋতুপর্ণ ঘোষ এভাবেই পরিচিত। যীশু সেনগুপ্ত বলছিলেন, মুম্বাই নাকি ঋতুদার নাম শুনে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। প্রিয় বন্ধু বুম্বা জানতে চাইছে, আজ কি রান্না হয়েছে জন্মদিন উপলক্ষ্যে। আজ ৩১ শে আগষ্ট প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের ৫৮ তম জন্মদিন। ৮ বছর আগে ৩০ শে মে অমৃতলোকে যাত্রা করেছিলেন সকলের প্রিয় ঋতুদা।

ঋতুপর্ণর চিন্তা চেতনা ছিল একটু ভিন্ন স্বাদের। কখনও গরের মাঠ কখনও টিপু সুলতান মসজিদ, ঋতু শুটিং স্পট বাছতেন টেকনিক্যালি। ১৯৬৩ সালে দক্ষিন কলকাতায় জন্ম ঋতুপর্ণ ঘোষের। বাবা মা দুজনেই ছিলেন সিনেমা জগতের সঙ্গে জড়িত। তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হওয়ার পরেও ঋতুর ইচ্ছে ছিল সিনেমা তৈরি করার।তবে শুরুটা হয়েছিল একটি বিজ্ঞাপন কোম্পানি তে কপি রাইটার হিসেবে কাজ করা থেকে। ৮০’ র দশকে তার লেখা একটি স্লোগান বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। শারদ সম্মান ও বোরোলিন – এর বিজ্ঞাপন। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় ঋতুপর্ণর প্রথম ছবি ” হীরের আংটি”। এরপর তার পরিচালিত ” উনিশে এপ্রিল” ছবিটি জাতীয় পুরস্কার লাভ ১1করে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঋতুকে । এরপর ১৯৯৫ সালে সুচিত্রা মিত্রের কাহিনী অবলম্বনে রিলিজ করে “দহন”, কলকাতার বুকে একটি সদ্য বিবাহিতা মেয়ের শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরব হয়েছিল একটি অচেনা মেয়ে। ঋতুপর্ণর নির্দেশনায় ইন্দ্রানী হালদার ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অনবদ্য অভিনয় এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল বাংলা সিনেমায়। ২০০০ সালে মুক্তি পায় “বাড়িওয়ালি” বলিউড অভিনেত্রী কিরণ খের এক নিঃসঙ্গ মহিলার উদ্দাম কামনার চিত্র তুলে ধরেছিলেন ঋতুপর্ণর সিনেমায়। এই ছবিটিও জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ২০০৩ সালে আগাথা ক্রিস্টির গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় “শুভ মহরত”, শর্মিলা ঠাকুর ও রাখি গুলজার অভিনীত এই ছবিতে ছিলেন একগুচ্ছ তারকা। সেই বছরেই কবিগুরুর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় ” চোখের বালি”, বিশ্ব সুন্দরী ঐশ্বর্য রাই কে কাস্ট করেন ঋতু। ২০০৪ সালে ফের রাইটারের ছবির নায়িকা ঐশ্বর্য। তবে এবার তার প্রথম হিন্দি ছবি, ” রেনকোট”। শ্রেষ্ঠ হিন্দি ছবি বিভাগে পুরস্কৃত হয় এই ছবি। ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ” দা লাস্ট লিয়ার” একজন অভিনেতার জীবনের কাহিনী নিয়ে তৈরি এই সিনেমায় ঋতুপর্ণ কাস্ট করেন বলিউডের বিগ বি অমিতাভ বচ্চনকে। সঙ্গে ছিলেন প্রীতি জিন্টা ও অর্জুন রামপাল। ২০০৮ সালে বলি অভিনেত্রী মনীষা কৈরালাকে নিয়ে আসেন ” খেলা ” ছবিতে। ২০০৯ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ছবি “আবহমান” রিলিজ করেছিল। সত্যজিতের অন্ধভক্ত ঋতুপর্ণ সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে একটি ছবি করছিলেন কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই জীবনের কাছে হেরে যান ঋতুপর্ণ ।

বিখ্যাত এই মানুষটিকে নিয়ে সঙ্গীতা দত্ত তৈরি করেছেন ডকুমেন্টারি “বার্ড ওফ ডাস্ক”। সেখানে ঋতুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তার কাছের মানুষরা। শুধু যে ছবি নির্মাণ, তাই – ই নয় অভিনয় করেছেন ওড়িয়া ছবি ” দেইথিল্লি মা কুই” তে। কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায় “আরেকটি প্রেমের গল্প” ও সঞ্জয় নাগের ” মেমোরিস ইন মার্চ” সাবলীল অভিনয় ঋতুর। একটা ক্লাসিক যুগের সূচনা হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। সমালোচনা, বিতর্ক, ঠাট্টাকে পিছনে ফেলে ঋতুপর্ণ নিজেকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে। সোশ্যাল ট্যাবু আর নকল সমাজের মুখোশ খুলে মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় আজও স্বমহিমায় বিরাজমান ঋতুপর্ণ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Next Post

কাশ্মীর হানার ছক কষছে জঙ্গীরা ? । এম ভারত নিউজ

ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে তাণ্ডব চালাচ্ছে তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। ভয়ে আতঙ্কে জীবন হাতে নিয়ে পালাতে চাইছেন সে দেশের বাসিন্দারা। শুধু আফগানিস্তানেই নয় অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও সন্ত্রস্ত এই হামলায়। ভারতেও এর আচ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেশের। এরই মধ্যে বিপদের বাণী শোনাল ভারতের গোয়েন্দা দপ্তর। কাশ্মীরে হতে পারে জঙ্গি হামলা, ভারতের দিকে টার্গেট […]

Subscribe US Now

error: Content Protected