নিজস্ব সংবাদদাতা,পূর্ব মেদিনীপুরঃ
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের রূপনারায়ন নদীর ইলিশ নাম শুনলেই ইলিশ পিপাসুদের জিবে আসে জল। সারা দিনের কাজের ক্লান্তির পরে যখন কোলাঘাটের ইলিশের গন্ধ নাকে আসে সমূহ ক্লান্তি দূর হয়ে যায় বাঙ্গালীদের। কারণ সুস্বাদু ইলিশ যা পদ্মার ইলিশ কিংবা দীঘা ইলিশের চেয়েও আলাদা স্বাদ। কিন্তু এখন শুধুই মা কাকিমা দের গল্প শুনা যায়, বাস্তবে কোলাঘাটে ইলিশ বিলুপ্ত। এক সময়ে বর্ষার সময়ে উপার্জন থেকে সারা বছর সংসার চালাতেন এলাকার মৎস্যজীবীরা। বর্তমানে ইলিশের আকালে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে হাতে টানা নৌকার সাথে মেশিন চালিত টলার ব্যবহার বেড়েছে। ডিজেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি। যার ফলে হিমশিম খাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। সারাদিন রূপনারায়ণ নদীতে ঘুরেও পর্যাপ্ত ইলিশ দেখা নেই। সারাদিনের পর প্রতিটা লৌকা কিংবা ট্রলার থেকে ইলিশ আসছে ২ থেকে ৫ কিলো। জার ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মৎস্যজীবীরা। মৎস্য জীবীরা মূলত নদীর দূষণ এবং ডিভিসি জল ছাড়াকে দায়ী করছে। অনেকেই মনে করছেন নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ করলে এবং গভীরতা বৃদ্ধি করলে হয়তো আবার সোনালি দিন ফিরতে পারে। কিন্তু তত দিনেও কি কোলাঘাটের ইলিশ দেখা যাবে ? স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় কোলাঘাটের ইলিশের চাহিদা বরাবরই থাকে তুঙ্গে। এ’বছরও সেই চাহিদার কমতি নেই।
বাজারে প্রচুর চাহিদা কোলাঘাটের ইলিশ, কিন্তু যোগান কম থাকার কারণে সে হারে পাওয়া যাচ্ছে না কোলাঘাটের ইলিশ। রূপনারায়ণ নদের দূষণ বাড়ছে। পাশাপাশি নদের গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় মুখ ফিরিয়েছে ইলিশের ঝাঁক। ক্রমাগত ডিভিসি জল ছাড়ছে। নতুন জলের গন্ধে মুখ ফিরাচ্ছে কোলাঘাটের ইলিশের ঝাঁক । কোলাঘাটে মৎস্য রসিকরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনই সংকটে পড়েছেন রূপনারায়ণের উপর নির্ভরশীল মৎস্য জীবীরাও। এক সময়ে বর্ষার সময়ে উপার্জন থেকে সারা বছর সংসার চালাতেন মাঝিরা। বর্তমানে ইলিশের আকালে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ করলে এবং গভীরতা বৃদ্ধি করলে হয়তো আবার সোনালি দিন ফিরতে পারে। ২০ থেকে ২৫ বছর আগেও রূপনারায়ণ নদের পাড় ইলিশ বিক্রির জন্য গমগম করত। ওপারে হাওড়া জেলার ইলিশ পিপাসু মানুষ এবং এপারের মেদিনীপুরের ইলিশ পিপাসু মানুষ কোলাঘাটের ইলিশ নেওয়ার জন্য ভিড় জমাতো। নদী থেকে মৎস্যজীবিরা জ্যান্ত ইলিশ ধরেই বিক্রি করতো নদীর পাড়ে এসে। কোলাঘাটে ইলিশের দামের যেমন অন্যদের চেয়ে একটু বেশি থাকলেও স্বাদে অতুলনীয়। কিন্তু এই যুগে ইলিশ পিপাসু মানুষ রয়েছে, কিন্তু সেই ইলিশ আর চোখে পড়ছেনা আপামর জন সাধারনের। প্রায় কয়েকশ’ মৎস্যজীবী রূপনারায়ণের রুপোলি ইলিশ তুলেই দিন গুজরান করতেন। কয়েক বছর ধরেই ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে।

দিনের পর দিন কোলাঘাট শহর ও বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য নদীতে মিশে দূষণ ও পলি জমে। সামনেই কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট এবং রামকো সিমেন্ট কারখানার দূষিত জল কোলাঘাট রূপনারায়ণ নদীতে পড়ছে। এতে জলদূষণের মাত্রা বাড়ছে।নদীর গভীরতা কমে যায়। বঙ্গোপসাগর থেকে নদীর অভিমুখে ইলিশের ঝাঁক মুখ ফেরায়। তাই ধীরে ধীরে কোলাঘাটের ইলিশের সোনালি দিন হারাতে বসেছে । মাঝিরা জানাচ্ছেন, দূষণ রোধ করতে হবে এবং নদী খনন করতে হবে। তাহলে হয়তো যদি আগামী দিনের মতন রুপালি কোলাঘাটের ইলিশের দেখা যেতে পারে ইলিশ পিপাসু মানুষদের।