গত বছর মহামারীর কারণে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় জমানোর ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে দর্শকদের প্রবেশাধিকার ছিল না মণ্ডপে। এবার এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। তাই এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে কলকাতার পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় করে ঠাকুর দেখার অনুমতি আদৌ মিলবে কি না সেই বিষয়ে নয়া কাঁটা কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নতুন নির্দেশিকা। মাত্র দু’দিন আগে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের ওই চিঠিতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, রাজ্যের যে সব জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি, সেখানে কোনও ধরনের জনসমাগমের অনুমতি যেন না দেয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের ২৩টি জেলায় সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। ওই জেলাগুলিতে উৎসবের মরসুমে কোনরকম জনসমাগম এড়ানোরই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফ থেকে। পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে কেবল কলকাতাতেই সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। ফলে কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে কলকাতার পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় এড়ানোই বাঞ্ছনীয়। কলকাতা ছাড়া এই রাজ্যের অন্য কোনও জেলা আপাতত এই মুহূর্তে আশঙ্কাজনক (সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ) জেলার তালিকায় নেই। কিন্তু পুজোর ভিড়ে সংক্রমন বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে জনসাধারণের কাছে স্বাস্থ্যকর্তাদের আবেদন, আগামী তিন মাসে করোনা সংক্রমণের যাতে নতুন করে গতি বৃদ্ধি না হয়, তার জন্যই এই বছরটিতে বাড়িতে থেকে আনন্দ করুন সবাই। আগামী বছর বরং পথে নামবেন সবাই।
কেরল ও মহারাষ্ট্রের লাগামছাড়া সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি কলকাতা-সহ দেশের ওই ২৩টি জেলা নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণের কথায়, “পরিস্থিতি দেখে বলা যায়, সংক্রমণ আগের থেকে কমলেও এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। দেশের ওই ২৩টি জেলাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রমাণ এখনও সক্রিয়।” এর মধ্যে ফের উৎসবের মরশুম ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। তাই তৃতীয় ঢেউ রুখতে উৎসবের দিনগুলির জন্য বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ করে তা রাজ্যগুলিকে যথাসম্ভব পালনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে সব জেলায় সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নীচে, সেখানে জনসমাগম হতে পারে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে। কিন্তু নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি সংখ্যক মানুষের ভিড় করা যাবে না। স্থানীয় প্রশাসনকে জমায়েতের উপরে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কেউ নিয়মের অন্যথা করলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে প্রশাসনকে। কিন্তু যে এলাকাগুলি কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে চিহ্নিত অথবা যে জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি, সেখানে যাতে কোনরকম জনসমাগমই না হয়, স্থানীয় প্রশাসনকে তা দেখতে বলা হয়েছে। আপাতত করোনার তৃতীয় ঢেউ রুখতে মরিয়া কেন্দ্র সরকার। তাই বাঙালির পুজোর আনন্দই কিছুটা হলেও রাশ টানতে চলেছে সরকার।