কখনও খেয়াল করে দেখেছেন হাতে ফোনটি না থাকলে কেমন নিদারুণ অসহায় লাগে নিজেকে? কখনও ফোনটা চুরি গেলে তো আর কথাই নেই, সে যেন সন্তান হারানোর শোক এসে ঘিরে ধরে চারিদিক থেকে। মনোবিদদের দাবি, এটি একটি মানসিক রোগ। আধুনিক পৃথিবীর বাসিন্দারা প্রায় সকলেই আক্রান্ত এই মহামারীতে। এর কোনও টিকা নেই, নেই কোনও ওষুধ । এই রোগের পোশাকি নাম ‘নোমোফোবিয়া’ । একটি স্মার্ট ফোন গোটা দুনিয়াকে হাতের মুঠো এনে দিয়েছে। এর জেরে লাভের অঙ্কের শেষ নেই। কিন্তু পাশাপাশি এর জেরে যে ভয়ানক লোকসান হচ্ছে তা খেয়াল করেও এড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2021/04/sad-woman-phone-sofa-bed-1024x684.jpg)
আজকাল আমাদের জীবনে ২৪ ঘন্টার সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে ফোন। সকালে ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোনোর আগের মুহূর্ত অবধি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা বা ওয়েবসিরিজ। ফোন ছাড়া জীবন যেন এক্কেবারে আলুনি। হাতে ফোন নিয়ে প্রতিমুহূর্তেই চলছে খুটখাট। কেউ ব্যস্ত গেম খেলতে কেউ আবার মগ্ন স্যোশাল মিডিয়ায়। এই করোনা পরিস্থিতিতে ফেসবুক ইন্সটাগ্রামে প্রতিনিয়ত উঠে আসছে মৃত্যুর খবর, প্রতিনিয়ত বাড়ছে নেগেটিভিটি।
স্যোশাল মিডিয়ায় লাইক শেয়ারের মোহ পেরিয়ে আজকাল বেশ কিছু মানুষ মজেছেন রাজনীতিতেও। ফেসবুক ট্যুইটারের মতন প্ল্যাটফর্মগুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির নবীনতম মঞ্চ। মানুষ রীতিমতো ঝগড়াঝাটি থেকে শুরু করে ব্যক্তি আক্রমনও করছেন স্যোশাল মিডিয়ায়। এই সমস্ত কাজকর্ম বাড়িয়ে তুলছে মানসিক চাপ এবং উত্তেজনা। ক্রমাগত ‘কপি পেস্টের’ ফাঁদে পড়ে প্রতিনিয়ত ভোঁতা হচ্ছে বুদ্ধি। সৃজনশীলতা হারাচ্ছে মানুষ। পারিবারিক জীবন হোক বা দাম্পত্য হাতে ফোন নিয়ে অধিকাংশ সময় কাটায় ভাঙন ধরছে সবকিছুতেই। অনৈতিক ভাবে ভাঙাগড়া চলছে সম্পর্কে। সম্পর্কে একে অপরকে ঠকানোর যেন প্রতিযোগিতা লেগেছে যুবসম্প্রদায়ে।বাড়ছে অবসাদ, বাড়ছে অপরাধ। আসল পৃথিবীটা থেকে দূরে সরতে সরতে ভার্চুয়াল দুনিয়ার শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে মানুষ বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ।
এই ভয়াবহ নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে মুক্তি নেই। সতর্ক করছেন মনোবিদরা। যদিও এ এমনই নেশা যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসক্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না আসক্তির কথা। আপনি যদি বুঝে থাকেন নিজের এই ভয়ানক মোবাইল আসক্তির কথা তাহলে সাবধান হোন এই মুহুর্তে।
কি করতে পারেন
সপ্তাহে অন্তত একদিন মোবাইল ফোন থেকে ছুটি নিন। সোশ্যাল মিডিয়া, নেট সার্ফিং, খবর জানা এমনকি সম্ভব হলে ফোন রিসিভ করাও বন্ধ রাখুন। প্রথম প্রথম অসম্ভব মনে হলেও পরে দেখবেন মনে স্বস্তি পাচ্ছেন।
সময় কাটান পরিবারের সঙ্গে। সঙ্গীর সাথে সময় কাটানোর সময় মোবাইল ফোন নৈব নৈব চ। একসঙ্গে সিনেমা দেখুন, আড্ডা মারুন, গল্প করুন, ইনডোর গেমস খেলুন।
খেয়াল করুন কোন কোন অ্যাপ গুলিতে সবচেয়ে বেশি সময় কাটান আপনি। ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন সেই অ্যাপ গুলিকে। তা সে শপিং অ্যাপই হোক বা ডেটিং অ্যাপ। আপনি স্যোশাল মিডিয়ায় কয়েকদিনের জন্য সক্রিয় না থাকলেও কিচ্ছু এসে যাবেনা আপনার।
হাতে লেখা অভ্যেস করুন। সপ্তায় অন্তত একদিন হলেও ডায়রি লিখুন। চিঠি লিখুন বন্ধুদের। প্রেমপত্র লিখুন। পিডিএফ ছেড়ে বই পড়ুন। ক্যালকুলেটর এর বদলে কড় গুনে হিসেব করা অভ্যেস করুন। তারিখ দেখার জন্য ব্যবহার করুন দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডার।
নিজেই নিজের কাছে ফোন না ছোঁয়ার শপথ নিন। এই যেমন ঘুমোনোর এক ঘণ্টা আগে ফোনে হাত দেবেন না। ঘুমোবার সময় মাথার কাছে ফোন রাখবেন না। ঘুম থেকে উঠেই ফোন চেক করবেন না। ফোনে হাত না দিয়েই পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাবার খাবেন, অফিসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে হাত দেবেন না।
স্যোশাল মিডিয়ায় যাদের করা পোস্ট আপনার মন খারাপ করাচ্ছে ব্লক করুন তাদের। ভার্চুয়াল বন্ধুদের সংগেচ্যাটের পরিবর্তে দেখা করে কথা বলুন সত্যিকারের বন্ধুদের সাথে।
অনেক অনেক বড়, অনেক সুন্দর এই পৃথিবীটা। তাকে এক ‘বোকাবাক্সে’বন্দী করে নিজের জীবনের সবটুকু রঙকে হারিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাপের সঙ্গে কথা বলে নাইবা লুকোলেন একাকিত্ব । চেষ্টা করেই দেখুনইনা আর একটা বার।