সাধারণের মধ্যেও অসাধারণকে বেছে নেয় ‘পদ্মশ্রী’। ২০২০ সালের পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপকদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন মোট ১১৯ জন ভারতবাসী। বিপুল সংখ্যক এই ভারতীয়দের মধ্যে একদিকে যেমন সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের বিরাজ, ঠিক তেমনি সাধারণভাবেই অসাধারণ কাজ করে যাওয়ার জন্য, এই তালিকাতে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। আর এমনই এক পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় তথা কর্নাটকের হাক্কি জনজাতির অন্তর্গত আদিবাসী মহিলা তুলসী গৌড়া নিজের জায়গা করে নিয়েছেন এই তালিকায়। ৭০ বছর বয়সী এই আদিবাসী বৃদ্ধা নিজের অসাধারণ কাজের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। পোশাক-পরিচ্ছদে নিজের জনজাতিকে আরও একবার তুলে ধরেছেন তিনি। পরনে ঐতিহ্যবাহী কর্ণাটকী শাড়ি, অথচ পায়ে জুতো নেই, যেন পোশাক পরিচ্ছদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার মত সময় তাঁর কাছে নেই। পদ্মশ্রী সম্মান নিতে এসে প্রধানমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায় তাঁকে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে করোজোরে প্রণাম করেন তিনি। তারপর ধীর গতিতে এগিয়ে যান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দিকে। সেখানেও রাষ্ট্রপতিকে বিনম্রচিত্তে প্রণাম জানাতে দেখা যায় তাঁকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কর্নাটকে বসবাসকারী তুলসী গৌড়া, নামক এই বৃদ্ধা নিজের জীবনের গত ছয় দশক ধরে পরিবেশের উদ্দেশ্যে নিজের সর্বস্বটুকু দান করেছেন। জানা যায়, এখনও পর্যন্ত মোট ৩০ হাজার বৃক্ষ রোপন করেছেন তিনি। পাশাপাশি এই সমস্ত চারাগাছ গুলিকে লালন-পালন করে পূর্ণ বৃক্ষে পরিণত করেছেন এই বৃদ্ধা। খুব ছোট বয়সেই নিজের বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। তারপর নিজের মায়ের সঙ্গেই পার্শ্ববর্তী এক নার্সারিতে কাজ করতেন তুলসী দেবী। মাত্র ১ টাকা ২৫ পয়সার বিনিময়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। নিজের কর্মজীবনের ৩০ টা বছর পার করে আসার পরে নার্সারির তরফ থেকে একটি প্রকৃত কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেওয়া হয় তাঁকে। পরিবেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে গাছের গুরুত্ব ঠিক কতটা, তা আর নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। আর আজকের যুগে দাঁড়িয়েও বিদ্যালয়ের পুঁথিগত শিক্ষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেকে গাছের ভেষজ গুন সম্পর্কে ক্রমাগত অবগত করে চলেছেন তিনি। আর সেই কারণেই তাঁকে এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফরেস্ট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।