মূলত চার রকমের ভাইরাস ডেঙ্গু রোগের কারণ হতে পারে। কোনো মানুষের দেহে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির পাশাপাশি ওই বাকি তিনটি ভাইরাসেরও স্বল্পমেয়াদি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। মহামারির সময় এই চার রকমের ভাইরাসই রোগীর শরীরে পাওয়া যায়। স্ত্রী এডিস এইজিপ্টি মশা ডেঙ্গু ভাইরাসকে মানুষের শরীরে সংক্রামিত করে। জ্বর, অসহ্য মাথা ব্যাথা, বমি, সারা শরীরে ব্যাথা, শরীরে র্যাশ, অস্বাভাবিক দুর্বলতা, রক্তপাত ও ক্ষুধামান্দ্য প্রভৃতি হল এই রোগের প্রধান উপসর্গ। এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। এ ব্যাপারে মূলত জ্বর কমানোর ওষুধ, প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা আর প্রচুর বিশ্রামের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ত্বকের র্যাশের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি বাড়ির আশেপাশে জঞ্জাল পরিষ্কার, মশা মাড়ার ওষুধ এবং কীটনাশক দিতে হবে।
রাতে মশারি ব্যাবহার অতি আবশ্যক। ডেঙ্গুর জটিলতার মধ্যে রয়েছে হেমোরেজিক জ্বর যার চিকিৎসা না করলে রোগ বেড়ে গিয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পরিণত হয়। ডেঙ্গু সারতে মোটামুটি ১৪ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। রোগ সারার পর অনেক দিন পর্যন্ত ক্লান্তি ও অবসাদ থেকে যায় রোগীর। তথ্য অনুসারে এখন প্রায় ৩৪৮ জন চিকিৎসাধীন। ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত সোমবার কোলকাতাতে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। তাদের মধ্যে একজন ৩৩ বছর বয়সী কেস্টপুরের বাসিন্দা। গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩৯৬ জন। আর খাস কোলকাতাতে এই রোগের সংক্রমণের হার সব থেকে বেশি।
গোটা রাজ্যে আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে ডেঙ্গি। ক্রমশ বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। হুগলীর উত্তরপাড়ায় স্বপন ঘোষ নামক পেশায় ব্যাবসায়ী এক ব্যক্তি প্রবল জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং রক্ত পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু হয়েছে বলে জানা যায়। বুধবার রাতে মৃত্যু হয় তার। অনেক আগে থেকেই হুগলীতে ডেঙ্গির পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্রমাগতই সতর্ক বার্তা দেওয়া হচ্ছে পুরসভার তরফ থেকে। উপরন্তু এই ঘটনায় এলাকায় আরও বেশি আতঙ্ক আর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজ্যের কোলকাতা সহ হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, অয়ালিপুরদুয়ার এবং মুর্শিদাবাদেও ডেঙ্গুর পরিস্থিতি খুবই খারাপ।