অবশেষে পিতৃপক্ষের শেষ হয়ে মাতৃ পক্ষের সূচনা। আর এর মধ্যবর্তী সময়কে বলা হয় মহালয়া। আজ সকাল থেকেই এই মাহেন্দ্রক্ষণের আবির্ভাবকে দিকে দিকে পালন করা হয়েছে। শরৎের আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ থেকে শুরু করে কাশফুলের দোলা সবকিছুই জানান দিচ্ছে দেবীপক্ষের সূচনার। আজ সকাল থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে দেবীর চক্ষুদানের প্রস্তুতি। নির্দিষ্ট এক লগ্নে সমস্ত দেবী প্রতিমার চক্ষুদান করা হয়। মূলত আজকের দিনে এই বিশেষ লগ্নে চক্ষুদান দেখতে কুমোরটুলিতে উপস্থিত হয় শয়ে শয়ে পর্যটক। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মণ্ডপে চক্ষুদানের ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শহরের বাতাবরণে এক অদ্ভুত পরিবর্তন আসে আজকের দিনে।
বাঙালির সর্বশেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হতে বাকি আছে আরও বেশ কয়েকটা দিন। তবে দেবীপক্ষের সূচনা অর্থাৎ মহালয়ার দিন থেকেই এক রকম ভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি মন্ডপ খুলে দেওয়া হবে মহানগরীতেও পরিদর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে আজকের এই দিনটার এক বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে বাঙ্গালীদের জীবনে। বাড়ির পুরনো ট্রানজিস্টার রেডিওটাও আজকের দিনে একবার ধুলো ঝেড়ে নতুন করে সেজে ওঠে। আজ ভোর হতে না হতেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে উচ্চারিত মহালয়ার শ্লোক গুলি আরও একবার শোনা হয়। প্রতিটা অলিতে-গলিতে একই সঙ্গে বেজে ওঠে, ‘ বাজলো তোমার আলোর বেণু’।
মহালয়ার এই তিথিতে মহানগরীর সহ পার্শ্ববর্তী প্রতিটি শহরের চিত্র প্রায় একই রকম। বহুদূর থেকে মানুষ ছুটে আসেন আজ গঙ্গায়, পূর্বপুরুষকে তর্পণ দেওয়ার জন্য, তর্পণ অর্থাৎ সন্তুষ্ট। মহালয়ার এই তিথি হল পূর্ণ অমাবস্যা। আজকের দিনেই তিন পুরুষ পর্যন্ত মৃত ব্যাক্তিরা তর্পনের আশায় মর্তে আসেন। আর সেই উদ্দেশ্যেই আজ ঘাট গুলিতে পিতৃতর্পণের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয় বহু ব্যক্তি। তবে বর্তমানে গঙ্গার পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকার কারণে অধিকতর নিরাপত্তা ও সাবধানতা অবলম্বন করে তর্পণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন ঘাট গুলিতে। আজ সেই চিত্রই দেখা গেল মহানগরীর বাবুঘাট থেকে শুরু করে বাগবাজার ঘাট সর্বত্রই। তবে ভিড়ের ঠেলায় শিকেয় উঠেছে করোনাবিধি। তবে পুলিশি তৎপরতায় পুরোদমে চেষ্টা চালানো হচ্ছে সর্তকতা অবলম্বনের মাধ্যমেই তর্পণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার। তবে বাস্তব বাক্যে বলতে গেলে, এই তর্পণ কোনও শুভ অনুষ্ঠান নয় অর্থাৎ এই তিথি কোনও শুভ তিথি নয়। বাস্তবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানকে যেমন শুভ বলে অভিহিত করা যায় না, ঠিক তেমনি মহালয়ার এই তিথিকেও শুভ মহালয়া বলা যায়না।তবে আজ দেবীপক্ষের এই সূচনালগ্নে দেবীকে আহ্বান জানাতে প্রকৃতি নিজেকে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত করেছে।