![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2021/05/WhatsApp-Image-2021-05-24-at-17.46.03.jpeg)
বুধবার সকালেই রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চল জুড়ে দাপট দেখিয়েছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ঠিক কতখানি ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের তা এখনও বলা সম্ভব নয়। যদিও একপ্রকার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে সুন্দর বন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রায় ১কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এই তান্ডবের জেরে, ভেঙে পড়েছে ১ লক্ষেরও বেশি কুঁড়ে ঘর, এমনটাই জানিয়েছেন য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে একথাও বলেন তিনি। আজ সকালেই প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে আছড়ে পড়ে ইয়াস। এর সঙ্গে এই দানবের দোসর ছিল পূর্ণিমা এবং ভরা কোটাল। যার জেরে নদী এবং সমুদ্র গুলিতে শুরু হয় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস। ভেঙে যায় শতাধিক বাঁধ। জলমগ্ন কয়েকশো গ্রাম। সুন্দরবনের চোরামারা গ্রামে সমুদ্রের বানে ভেসে মৃত্যু হয়েছে ১ বৃদ্ধের। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩লক্ষ মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে নিরাপদ স্থানে। ঝড়ের প্রকোপ একটু কমলেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। মেদিনীপুরে উদ্ধারকার্যে নামে সেনা। একই সঙ্গে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালাতে থাকে এনডিআরএফের দলও।
জলমগ্ন মানুষদের উদ্ধারের জন্য ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনীর ২টি লাইফবোট নামান হয় হলদিয়ায়। নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলিতে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে যায় হলদিয়ার গ্রামে। প্রায় ৫০০০ মানুষ ঘর ছাড়া হয়ে পড়েন। হলদি নদীতে জলোচ্ছ্বাসের ফলে রায়রায়চক , রাজারচক ও পৈড়ায়চক তিনটি গ্রাম একেবারেই জলমগ্ন। নয়াচরের মানুষদের উদ্ধারের কাজে নামান হয় হোভারক্রাফট। এককথায় ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে দীঘা, শংকরপুর,মন্দারমনি এলাকা। কয়েক হাজার বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি আজ দীঘায় ভেসে যায় সংবাদমাধ্যমের গাড়িও। শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের গোবরা-আচাইপুর গ্রামের প্রায় ৩৫০টি বাড়ি ডুবে যায় জলের তলায়। তমলুক – কোলাঘাট নদী বাঁধের উপর সোয়াদিঘী , খসরেখা, গুজার খারুই, জামিট্যা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে পড়ে গ্রামে।
সম্পুর্ন প্লাবিত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকাও।জলের নীচে রায়দিঘি, গঙ্গাসাগর, কুলতলি,কুলপি,নামখানা ও বকখালি সহ অজস্র এলাকা। সম্পুর্ন ডুবে গিয়েছে ঘোরাঘাটা দ্বীপ।প্লাবিত বাসন্তি,ক্যানিং সহ গোটা সুন্দরবন। গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধির ফলে সদর হাওড়ার পৌরনিগমের একাধিক এলাকার পাশাপাশি গ্রামীণ হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভার ফুলেশ্বর,উলুবেড়িয়া কালিবাড়ি,থানা সহ শহরের একাংশ কার্যত বন্যার রূপ নেয়।প্লাবিত হয় কালিনগর,হীরাপুর,৫৮ গেট,গড়চুমুক,মাতাপাড়া সহ একাধিক এলাকা। রূপনারায়ন নদের জলস্তর বৃদ্ধির ফলে প্লাবনের হাত থেকে বাদ পড়েনি কথা সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসগৃহ, স্নানেরঘাট সহ একাধিক এলাকা।
আদি গঙ্গায় জল স্তর বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত কলকাতার বেশ কিছু এলাকাও। ফুঁসছে গঙ্গা। বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভরা জোয়ারে আরও বাড়বে জলস্তর এই আশঙ্কাই আপাতত ঘুম কেড়েছে মানুষের। মঙ্গলবার রাত থেকেই নবান্নের কন্ট্রোল রুমে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী শুক্রবার আকাশপথে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী, আপাতত এমনটাই জানা যাচ্ছে নবান্ন সূত্রে।