শিক্ষা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী; এ এক যুগ যুগান্তরে সম্পর্ক। তবে যুগ যুগ ধরে এই সম্পর্কে সার্বিক পরিবর্তন ঘটলেও তার মূল সূত্র আজও একই রয়েছে। গাছের নিচে বসে বেদ পঠনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান থেকে শুরু করে, আজ জুম কল বা গুগোল মিটের দুনিয়াতে শিক্ষা প্রদান, মাধ্যম বদলে গেল, শ্রদ্ধা সম্মান কোন কিছুই বদলায়নি। স্বাধীনতার আগে থেকে শুরু করে আজ ২১ শতকের করোনাকালীন কঠিন পরিস্থিতিতে শিক্ষাকে থামিয়ে না রাখার পেছনে যুগযুগান্তর ধরে বহু শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কখনও মহিলা শিক্ষার প্রসারে শিক্ষকদের তীব্র লড়াই আজ বিশ্বদরবারে মহিলাদের নিজেদের স্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম করেছেন। তো কোথাও কোন শিক্ষক মেট্রোপলিটন সিটিতে নিজের লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামের ভেঙেচুরে পড়ে থাকা স্কুলে গ্রামের গরিব বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদান করে তৈরি করেছেন একেকটি হীরে। সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনের ত্যাগে যতটা না শান্তি, তার থেকে অনেক বেশি শান্তি পাওয়া যায় ছাত্র-ছাত্রীদের পরম শ্রদ্ধায়। হ্যাঁ ঠিক এমন চিন্তা ভাবনার সঙ্গে আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত বিদ্যাচর্চা হয়ে চলেছে কিছু শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায়।
তবে আজকের এই দিনে বিশেষ প্রাধান্য শিক্ষক দিবস হলেও তার পেছনে রয়েছেন ভারতের অনবদ্ধ শিক্ষক ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ। আজ তাঁর জন্মদিন। তবে একজন শিক্ষকের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ভারতের রাষ্ট্রপতিত্ব করেছেন তিনি। দীর্ঘ দশ বছরের জন্য উপরাষ্ট্রপতি থাকার পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি। জানা যায় নিজের শিক্ষাজীবনে শিক্ষা গ্রহণ শেষ হলে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবনের সূচনা করেছিলেন। দীর্ঘকাল শিক্ষকতার মধ্যেই ব্যস্ত রেখেছিলেন নিজেকে। ক্রমেই নিজের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। একসময় ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদনে তাঁর জন্মদিন পালন করার কথা উঠলে তিনি বলেন, শিক্ষক দিবস হিসেবে তাঁর জন্মদিন পালন করা হলে তিনি গর্বিত বোধ করবেন। আর তারপর থেকেই আজ পর্যন্ত এই দিনটিকে ভারতের শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ডা. সর্বপল্লি রাধাকৃ্ষ্ণন ১৯৫২ – ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত ছিলেন। অবশেষে ১৯৬২ – ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব সামলেছিলেন। জানা যায় নিজের রাষ্ট্রপতিত্ব কালে ১০০০০ টাকা বেতনের মধ্যে মাত্র ২৫০০ টাকায় গ্রহণ করতেন তিনি। বাকি সমস্ত টাকা প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডে জমা করা হত। একজন শিক্ষক কেবলমাত্র বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে,পুঁথিগত বিদ্যা দান করেন না, জীবনে পথ চলার পথে বিভিন্ন সমস্যাকে অতিক্রম করে অগ্রগতি হওয়ার শিক্ষাও দান করেন।