আদালতের নজরদারিতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে দূর্নীতি মামলার তদন্তের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুক্রবার আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এদিনের নির্দেশিকায় শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই আদেশ দেওয়ার সময় এখনও আসেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পটি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত এই প্রকল্পকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেও উল্লেখ করেছিল।
সেই সময়ে আদালত জানিয়েছিল, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে গোপন সমঝোতার জায়গা রয়েছে। এই বন্ডের মাধ্যমে বেনামে রাজনৈতিক অনুদান দেওয়া যেত। ব্যক্তিগতভাবে এবং কর্পোরেট সংস্থা হিসাবে দুইভাবেই এই বন্ড কেনা যেত। বন্ড বিক্রি করা হত ‘স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া’ থেকে।
শীর্ষ আদালত ‘এসবিআই’কে অবিলম্বে বন্ড বিক্রি করা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি কারা কোন তারিখে কত টাকার বন্ড কিনেছে এবং কোন দল কত টাকার বন্ড পেয়েছে তার সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সেই সময় জানিয়েছিল, স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার জন্য কোনও ভোটারের রাজনৈতিক দলগুলির অনুদান সংক্রান্ত তথ্য জানানো অপরিহার্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে আইনেরও পরিবর্তন করা হয়েছিল। আগে, শুধুমাত্র লাভজনক সংস্থাগুলিই অনুদান দিতে পারত। এই বন্ড প্রকল্প চালুর সময়ে সেই বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়। এই পরিবর্তন অসাংবিধানিক বলে জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের দেওয়া সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হতেই দেখা যায়, লোকসানে চলছে এমন বেশ কিছু অনামী সংস্থাও নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল দিয়েছে বলে জানা যায়।
বিরোধী দলগুলিও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বন্ড নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল। সেই সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, কেন কোনও লোকসানে চলা সংস্থা, কোটি কোটি টাকার তহবিল দেবে রাজনৈতিক দলগুলিকে? তাহলে কি এগুলো কোনও ভুয়ো সংস্থা? ভুয়ো সংস্থাগুলিকে সামনে রেখে অন্য কোনও সংস্থা টাকা দিচ্ছে? এই লোকসানকারী সংস্থাগুলি যারা রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিয়েছে, তাদের তহবিলের উৎসের তদন্ত চেয়েই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বিশেষ বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে যদি প্রমাণিত হয়, সেই ক্ষেত্রে সেই অর্থ পুনরুদ্ধারের বিষয়েও আদালতের নির্দেশিকা চাওয়া হয়েছিল এই আবেদনে।