১৩ নভেম্বর রাজ্যে ৬ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। একুশের বিধানসভার ফল বলছে এই ৬ আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনই ছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে আর একটি আসন ছিল বিরোধী দল বিজেপির। কিন্তু এমন একটা সময় রাজ্যে উপনির্বাচন হতে চলেছে যে সময় আরজি কর হাসপাতালের অভয়ার ধর্ষণ ও মৃত্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। আর এই আবহে সামান্য হলেও অস্বস্তি বেড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের।
অভয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যে টানা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ছবি দেখা গিয়েছে মূলত সেসব অস্বস্তি নিয়েই উপনির্বাচনে লড়াই করতে হবে তৃণমূলকে। সে কারণে এবার তাদের জন্য এই উপনির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু উৎসবের মরশুমের মাঝেই ভোট আরও একটা সমস্যা রয়েছে। বাংলায় অন্তত উৎসবের দিনগুলিতে রাজনীতিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয় না মানুষ। আর তাই শাসকবিরোধী সপক্ষেই এই বিষয়টা মাথায় রেখেই তাদের মত করে কৌশল নির্ধারণ করছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস উপনির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করেছে। উৎসবের মরশুমের কথা মাথায় রেখেই এই সময় বড় প্রচার সভার থেকেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বে তরফ থেকে ইতিমধ্যেই যে জেলাগুলিতে ভোট রয়েছে সেই জেলার জেলা নেতৃত্বদের বলা হয়েছে আঞ্চলিক সমস্যা গুলিতে প্রকাশ করতে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা জেনে প্রার্থীকে সচেতন করতে। নির্বাচনী প্রচারের সেই আঞ্চলিক সমস্যাকেই বাড়তি গুরুত্ব দেবেন তৃণমূল প্রার্থী।
সাম্প্রতিক সময়ে আরজিকর নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল থাকলেও শাসক দলের নেতৃত্ব মনে করছে, আর জি কর ইস্যুর প্রভাব মূলত শহর কেন্দ্রিক। গ্রামীণ ভোটারদের উপর এর প্রভাব সেভাবে পড়বে না। মূলত সে কারণেই আঞ্চলিক বিষয়গুলিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
বিধানসভার উপনির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশল সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলছেন, আসন্ন উপ নির্বাচনে আরজিকরের প্রভাব সেভাবে নেই। এই ঘটনার প্রভাব শহর কলকাতা তার আশেপাশে একটু পড়লেও মফস্বল বা গ্রামীণ ভোটারদের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব নেই। তিনি মনে করছেন, এক্ষেত্রে উপনির্বাচনে ছয় আসনেই সহজ জয় পাবে তৃণমূল। তবে তৃণমূলের অন্দর যতদূর জানা যাচ্ছে, উপনির্বাচনে আরজিকর ইস্যুকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছে না শাসক দল। এক্ষেত্রে শাসকদলের অবস্থান হল-প্রথম থেকেই আর জি কর ইসুতে দোষীর করা শাস্তি চেয়েছে তৃণমূল। এমনকি বিভিন্ন সময় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন জানিয়ে তাদের সঙ্গে যেভাবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টিকে সমাধান করার চেষ্টা করেছে সবটাই ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হবে ভোটের প্রচারে।
এ প্রসঙ্গে সৌগত রায় বলেন, আরজিকরের ঘটনার জন্য যেহেতু তৃণমূল কংগ্রেস কোনভাবেই দায়ী নয়। তৃণমূল কংগ্রেস আরজিকর আন্দোলনের সময় নিষ্ক্রিয় থেকে যে কারণ মুখ্যমন্ত্রীর নিজেও চাননি প্রতিবাদের সময় বিরোধীরা যে ভূমিকা নিচ্ছিল তার আমরা সমালোচনা করি। তাই আমরা চুপ ছিলাম। তিনি চেয়েছিলেন বিষয়টি সঠিক সমাধান। যেহেতু সেটা হয়ে গেছে এই অবস্থায় খোলাখুলি ভাবে প্রচারে আর বাধা নেই। এক্ষেত্রে তার আরও দাবী যে বিরোধীরা আসলে আর জি কর ইসুর মাধ্যমে রাজ্য সরকারের ভালো কাজকে মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সেক্ষেত্রে ভোটের প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন স্বাস্থ্য সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী লক্ষ্মীর ভান্ডার এর মতো প্রকল্পগুলির কথা।
এবার উপ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে দলীয় অন্তর্ঘাত, মতানৈক্য এসবের ঊর্ধ্বে উঠেই লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন দলের শেষ নেতৃত্ব। এখনো পর্যন্ত যা খবর তাতে উত্তর ২৪ পরগনার দুই বিধানসভা আসন জেতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুজিত বোস, নির্মল ঘোষ, নারায়ণ গোস্বামী ও পার্থ ভৌমিকের মতো নেতাদের। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক প্রার্থীর উপর ভরসা রাখা হয়েছে তাই আরো বেশি করে জেলা ও স্থানীয় স্তরের নেতাদের সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। এই অবস্থায় দেখার, এই কৌশলে শেষ সুর পর্যন্ত ছয়-এ-ছয় হয় কিনা তৃণমূলের।