কথায় আছে শিল্পীর জোর তাঁর শিল্পকর্মে, আর লেখিকার জোর তার কলমে। তার উপরে যদি সেই লেখিকার কলমের খোঁচায় রক্ত ঝরার উপদ্রব হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। আর এমনই এক ডাকাবুকো লেখিকা হলেন তসলিমা নাসরিন। আজ তাঁর জন্মদিন। আর নিজের জন্মদিনের দিনেই আফগানিস্তানে কর্মরত এক বাঙালি মাস্টার মশাইকে এক হাত নিলেন তিনি। সদ্য তালিবান করায়ত্ত আফগানিস্তান থেকে ফিরেছেন এই মাস্টার মশাই। জানা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করা এই শিক্ষকের নাম তমাল ভট্টাচার্য। আর দেশে ফিরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানেই তালিবানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আর এখানেই গন্ডগোল। কোন সভ্য সমাজের সভ্য ব্যক্তি ,যে কিনা স্কুলের শিক্ষাকতার মত একটি মহান কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁর মুখের তালিবানি জঙ্গি গোষ্ঠীর নামে সুনাম শুনলে , স্বভাবতই যে কেউ অবাক হবে। আর সেখানে কিনা তাঁর দাবি , তালিবানদের শাসনকালে কাবাবে বেশি মাংস দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিমান বন্দরে প্রবেশ পথে তালিবানদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেও নাকি তার সঙ্গে যথেষ্ট ভাল ব্যবহার করে তারা। আর সেই কারণেই তাদের ভালোর সার্টিফিকেট দেয় তমাল। আফগানিস্তানে এতদিন থেকেও আফগানিস্থানবাসীর ওপর তালিবানদের অত্যাচার সম্পর্কে তমালের বিন্দুমাত্র ধারণা না জন্মানোর বিষয়টিকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না ওয়াকিবহাল মহল।
![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2021/08/taslima-nasrin-1024x649.jpg)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সমাজের ছোট ছোট বিষয়গুলি যখন আর পাঁচজনের চোখ এড়িয়ে যায়, তখন সেই বিষয় গুলোকে নিজের কলমের খোঁচায় সকলের সামনে নিয়ে আসেন তসলিমা নাসরিন। তার উপরে তালিবানদের প্রশংসা করার মত একজন ব্যক্তির বক্তব্যের যথেষ্ট উত্তর তাঁর লেখায় ফুটে উঠবে না! এমনটা হতেই পারে না । তমালের এই বক্তব্যের যথাযোগ্য উত্তর দিয়ে তসলিমা লেখেন, ”তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে বলে তালিবান ভালো? তারা অন্যের সঙ্গে কী ব্যবহার করছে তা দেখে তো তাদের সম্পর্কে রায় দিতে হবে! আফগান মেয়েরা যদি বলে আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে তালিবানদের সম্পর্কে মন্তব্য করো, তাহলে?” এখানেই শেষ নয় তিনি আরও লেখেন, “তমাল ভট্টাচার্য নামের এক বাঙালিবাবু আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তিনি দেশে ফেরার সময় তালিবান জঙ্গিদের সামনে পড়েছিলেন। তিনি তালিবানের সুমধুর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তাদের গুণগান গাইছেন এখন। তালিবান জঙ্গিরা ভোটে জিতে নয়, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসেছে। জঙ্গিরা ১,৪০০ বছরের পুরনো শরিয়ত আইন জারি করবে, শরিয়ত আইন কীভাবে মেয়েদের পাথর ছুড়ে হত্যা করে, মেয়েদের বোরখার অন্ধকারে বন্দি করে, স্কুল কলেজে যাওয়ার, উপার্জন করার, স্বনির্ভর হওয়ার অধিকার ছিনিয়ে নেয়, বাঙালিবাবুটি নিশ্চয়ই জানেন, তারপরও কী করে তিনি বলেন নব্বই দশকের তালিবান আর এখনকার তালিবানে বিস্তর তফাৎ! তাদের ব্যবহারে তিনি তফাৎ দেখেছেন। কিন্তু যে শরিয়ত আইনের অধীনে দেশ শাসন করতে তারা বদ্ধপরিকর, সেই শরিয়ত আইন তো একই আছে – নব্বই দশকে যা ছিল, এখনও তো তাই।”