![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2022/02/images-27.jpeg)
আজ ভারতীয় সঙ্গীত জগত এমন এক নক্ষত্রকে হারালো যাঁর শূণ্যস্থান কেউ কোনও দিন পূরণ করতে পারেননি এবং পারবেননা। লতা মঙ্গেশকর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইন্দোরে। ভাই-বোনদের মধ্যে ছিলেন অগ্রজ। বাবা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি ও কোঙ্কিণী সংগীত শিল্পী। পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন। অগত্যা বাড়িতে সংগীতের চর্চা শুরু থেকেই ছিল। খুব অল্প বয়স থেকেই গানের প্রতি আকর্ষণ ছিল লতার। ওই বয়সেই বহু বিজ্ঞের গানের ভুল সুধরে ফিতেন অদ্ভুতভাবে। তবে গানের মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার কিন্তু তিনি শুরু করেন পরে তারও আগে ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকেছিলেন একজন অভিনেত্রী হিসেবে।যদিও পরে তিনি বুঝেছিলেন এই মঞ্চ তাঁর জন্য নয়। ব্যাস মনস্থির করে ফেললেন গান নিয়েই গড়বেন ভবিষ্যত। গানের প্রতি, সুরের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা আর চর্চা তাঁকে ধিরে ধিরে এক অন্য শিখরে পৌঁছে দিল। আর ভারতীয় সংগীত জগত পেল এক কোকিলকণ্ঠীকে।
![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2022/02/images-25.jpeg)
১৯৪২ সালে একটি মারাঠি ছবির সৌজন্যে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। পরের বছর মরাঠি ছবি ‘গাজাভাউ’-এর জন্য ‘মাতা এক সুপুত কি দুনিয়া বদল দে তু’ গানটি রেকর্ড করেন লতা মঙ্গেশকর, এটি ছিল তাঁর প্রথম হিন্দি গান। এরপর লতার মুম্বইয়ে আসা এবং ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে ধ্রুপদী গানের তালিম পর্ব শুরু। এরপর ধীরে ধীরে বলিউডে পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। যদিও প্রতিটা পদক্ষেপে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায় নিজের ছবিতে লতাকে দিয়ে গান গাওয়াতে রাজি হননি, লতার হলা বড্ড বেশি সরু মনে হয়েছিল তাঁর। এই কথাই তিনি জানিয়েছিলেন মিউজিক ডিরেক্টর গুলাম হায়দারকে। তখন গুলাম শশধরকে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন, আগামিদিনে এই মেয়েকে দিয়ে গান গাওয়াতে পায়ে ধরবে গোটা বলিউড। এরপর তাঁর হাত ধরেই বলিউডে প্রথম কাজ শুরু করেন লতা। মজবুর ছবির ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোড়া’ গানটি রেকর্ড করেন লতা। শিল্পীর কথায়, ‘গুলাম হায়দার আমার গডফাদার’।
![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2022/02/images-29.jpeg)
মঙ্গেশকর কন্যা এক হাজারেরও বেশি হিন্দি ছবির গান রেকর্ড করেছেন এবং গান গেয়েছেন ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষায়।
অনিল বিশ্বাস, এসডি বর্মন, সলিল চৌধুরীর মতো সংগীত পরিচালকদের পছন্দের গায়িকা ছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী।
লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত গানের তালিকা অগুনতি, ‘অ্যায় মেরে বতন কে লোগো’, ‘লাগ জা গলে, ‘চলতে চলতে’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’- এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়।
![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2022/02/images-28.jpeg)
দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর সম্মানে ভূষিতা হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ২০০১ সালে দেশের সর্বোচ্চ অসমারিক নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয়েছিল লতা মঙ্গেশকরকে। ২০০৭ সালে ফ্রান্স তাদের দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার – ‘অফিসার অফ দি লেজিয়ান অফ অনার’ দিয়ে সম্মানিত করে লতা মঙ্গেশকরকে। আক্ষরিক অর্থেই তিনি সুরের সরস্বতী। আর সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে সরস্বতী দেবীর বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই সুরের সরস্বতীও যেন একই সঙ্গে পরলোকে গমন করছেন আজ।