নিজস্ব প্রতিবেদন, রানাঘাট : অবশেষে ন্যায় বিচার পেল রানাঘাটে আত্মঘাতী কিশোরী। সোশ্যাল মিডিয়ায় নগ্ন ছবি পোস্ট, অপমানে আত্মঘাতী কিশোরী, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অভিযুক্তের। সম্প্রতি শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন অর্থাৎ পকসো আইনের এই মামলায় অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় শুনিয়েছেন রানাঘাট আদালতের বিচারপতি সুতপা সাহা। বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ ? আজকের এই নব প্রজন্মে বিজ্ঞান যেমন এগিয়ে যেতে অনেকটা সাহায্য করেছে আমাদের তেমনই বিজ্ঞানকে হাথিয়ার করে দিনদিন সোশাল মিডিয়ায় ক্রাইমের দাপট বেড়েই চলেছে । বেড়ে চলেছে নগ্ন ছবি পোস্ট করার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার মত ঘৃণ্য অপরাধ।
মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী, প্রেমে অন্ধ হয়ে দ্বিগুণ বয়সী প্রেমিকের হাতে নিজের নগ্ন ছবি তুলে দেয়। এরপর প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে তৈরী হয়ে মনমালিন্যতা । তারপরেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কিশোরী । এরপরেই ঘটে বিপত্তি ! ব্রেকআপের অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়েটির অশ্লীল ছবি নেট মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় অভিযুক্ত ছেলেটি । তাতেও সম্পর্কে গতি না ফেরায় নিজেরই কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের মধ্যে সেই ছবি ছড়িয়ে দেয় সে। এই খবর জানতে পেরে অপমানে, আস্বস্তিতে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। অভিযুক্তের নাম অভিজিত (৩০) । অভিজিতের বিরুদ্ধে নিগৃহীতার কাকা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলে তাকে গ্রেফতার করা হয় । এরপর গত ৪ বছর যাবত আদালতে মামলা চলার পর সম্প্রতি সরকারী পক্ষের আইনজীবী রাজশ্রী বেহুরার দীর্ঘ লড়াইয়ে বিচারপতি সুতপা সাহা অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করার পাশাপাশি ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানার রায় শোনান। আসামী পক্ষের আইনজীবী বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ও দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যান অভিযুক্তকে নির্দোষ সাব্যস্ত করার। কিন্তু, অবশেষে সত্যেরই জয় হয়েছে।
পকসো আইনের নানান জটিলতা কিংবা তর্ক বিতর্ক বহুদিন ধরেই চলে আসছে ভারতীয় আইনের ইতিহাসে। রানাঘাট আদালত এই রায়ের মাধ্যমে রেকর্ড গড়েছে । কারন মেয়েটির মৃত্যু কেবল আত্মহত্যা নয়, খুন। সরাসরি শারীরিক ছোঁয়া দিয়ে যৌন নির্যাতন না হলেও শারীরিক ছবির বিনিময়ে ব্ল্যাকমেইল আর মানসিক অত্যাচার খুনের থেকে কোন অংশে কম নয়। সেলাম সেই নারীকে যারা একজন মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে এইভাবে এগিয়ে এসেছেন। ভারতের ইতিহাসে পকসো আইনের অধীনে এই মামলার রায় এক নজির গড়েছে।