অসুস্থ স্বামীর জন্য সাহায্য চাইতে গিয়ে হাসপাতালের এক কর্মীর কাছে যৌন হেনস্তার শিকার গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের একটি হাসপাতালে। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই মহিলার স্বামীর ফুসফুস ৬০% শতাংশই সংক্রমিত হয়ে যায়। ভালো করে কথা বলতে পারচহিলেন না তিনি। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে বিছানার চাদর বদলে দেওয়ার কথা বলে এবং স্বামীর জন্য জল চেয়ে হাসপাতালের এক কর্মীর কাছে সাহায্য চান ওই মহিলা। তখনই যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁকে। সেই মুহুর্তে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলেও এদিন 12 মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে সমস্ত হেনস্থার কথা বলেন ওই মহিলা। তিনি জানান “আমরা নয়ডার বাসিন্দা। হোলিতে অংশ নিতে বিহারে এসেছিলাম। কিন্তু ৯ এপ্রিল আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বর ছিল। কিন্তু কোভিড পরীক্ষায় দু’বারই নেগেটিভ আসে। এরপর আরটি-পিসিআর টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নয়ডার এক চিকিৎসকের কথায় ওঁর বুকের সিটি স্ক্যান করিয়ে দেখা যায় ফুসফুস ৬০ শতাংশ সংক্রমিত।’’ গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় ওই মহিলার স্বামীকে ভর্তি করা হয় গ্লোকাল হাসপাতালে।
ঘটনাচক্রে ওই একই সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন মহিলার মা’ও । হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেই কারণেই প্রায় সারাদিন ওই হাসপাতালেই কাটাতে হত মহিলাকে। ওই ভিডিওটিতে মহিলা আরও জানিয়েছেন “গ্লোকাল হাসপাতালে এক কর্মী ছিল। নাম জ্যোতি কুমার। তাকে সাহায্যের জন্য আবেদন করি। বলি, ওঁর বিছানার চাদরটা বদলে দিতে। সে সাহায্য করবেও বলে। কিন্তু যখন আমি স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখনই আমার ওড়নায় টান পড়ে। তাকিয়ে দেখি সে আমার কোমরে হাত রেখেছে। ওড়না ছিনিয়ে নিলেও কিছু বলতে পারিনি। আমার মা ও স্বামী এখানে ভর্তি আছেন। বারবার ভাবছিলাম যদি কিছু বললে ওরা ওঁদের কোনও ক্ষতি করে দেয়!’’ এছাড়াও হাসপাতালে চরম অব্যবস্থা ও অবহেলার অভিযোগ বারবার এনেছেন মহিলা।
তাঁর অভিযোগ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ২-৩ মিনিটের মধ্যেই চলে যেতেন রোগী দেখে। বাকি সময় কর্মচারী ও নার্সরা রোগীদের খেয়াল রাখা তো দূর, খাওয়ার জল টুকুও দিতেননা দরকারে। পরে অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে ওই মহিলার স্বামীর। সেখান থেকে তাই পাটনার রাজেশ্বর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। স্বামীকে বাঁচাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যেতেও রাজি ছিলেন মহিলা, কিন্তু স্বামীর শারীরিক অবস্থার জন্য সম্ভব হয়নি তা। মহিলার অভিযোগ সামান্য অক্সিজেন টুকুও দেওয়া হয়নি তাঁর স্বামীকে। যদিও এত চেষ্টার পরও তিনি বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে। তিনি বলেন “ব্ল্যাকে সিলিন্ডার কিনতে রাজি হইনি আমি। সেই কারণে স্বামীর অক্সিজেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। একেকটি সিলিন্ডার ৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল হাসপাতালের।” মহিলার অভিযোগ করোনায় নয়, তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসার অভাবে আর প্রতিমুহূর্তে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে।
বিহারের স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান ওই মহিলা এবং তাঁর পরিবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেন্ড করা হয় অভিযুক্ত ওই কর্মীকে। মহিলার বাকি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করছে প্রশাসন।