করোনা আবহের মাঝেও বীরভূম ভুলল না সিধু- কানুর আত্মত্যাগকে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিন হল এই হুল দিবস । আর আজ সেই সাঁওতাল নেতা সিধু কানুর স্মরণেই ,হুল দিবস উপলক্ষে বুধবার বীরভূমের সিউড়ি শহরের সিধু কানহু মঞ্চের কাছে থাকা সিধু কানহুর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হল জেলা বামফ্রন্টের তরফ থেকে। এদিন সকালে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলার একাধিক বামফ্রন্ট নেতৃত্ব এবং নেতাকর্মীরা। আজকের এই অনুষ্ঠানে করোনা সংক্রমনের কথা মাথায় রেখেই সামাজিক দূরত্ব মেনেই এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।
ইতিহাসটা প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো, ১৮৬৫ সালে সিধু-কানুর নেতৃত্বে হয় আজকের দিনেই শুরু হয় আদিবাসীদের বিদ্রোহ।আজকের দিনে ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন রাজকে হটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের শোষণ-নিপীড়ন এবং ব্রিটিশ পুলিশ-দারোগাদের অত্যাচারে নিষ্পেষিত সাঁওতাল জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ১৮৫৫ সালে সিধু মুরমু ও কানু মুরমু এবং দুই ভাই চান্দ ও ভাইরো ভারতের নিজ গ্রাম ভগনাডিহতে এক বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। আর সেই সমাবেশের ডাক থেকেই সূচনা হয়েছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের।
এই দিনেই ব্রিটিশ রাজ এবং মহাজন’ দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে নিজেদের সম্মান এবং স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে সমগ্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে। এরপর সিধু কানুকে গ্রেপ্তার করতে এলে ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের যুদ্ধ চালিয়ে ব্রিটিশ রাজকে মাথা ঝুকিয়ে নিতে বাধ্য করে এই সাঁওতাল বাহিনী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। সে সময়ে সেভাবেও গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে তাঁদের স্মরণে শুরু করা হয় হুল দিবস। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানা গেছে ১৯৫৪ সালের ৩০ শে জুন বীরভূমের সাঁইথিয়াতে ও ঐ বছরই বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গার খয়েরপাহাড়িতে গণজমায়েতের মধ্য দিয়ে ‘হুল দিবস ‘ উদযাপনের সূচনা হয় । আর তারপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে , সিধু কানু সহ বিভিন্ন সাঁওতালি আদিবাসী, যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের স্মরণ করে পালিত হচ্ছে হুল দিবস।