স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার এক মহিলার ফাঁসি হতে চলেছে। ফাঁসি হচ্ছে আমরোহার শবনম নামক এক মহিলার । পরাধীন এবং স্বাধীন উভয় ভারতেই বহু ফাঁসির নজির সামনে এসেছে তবে কোন মহিলা ফাঁসি দৃষ্টান্ত নেই ভারতের ইতিহাসে। দেশে মহিলাদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য বিশিষ্ট ব্যবস্থা করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মথুরায়। যদিও এখনও পর্যন্ত সেই মঞ্চে কাউকে তোলা হয়নি ।
কিছুদিন আগে নির্ভায়া হত্যাকাণ্ডের মামলায় ধৃতদের ফাঁসি দিয়েছিলেন মিরাটের পবন জল্লাদ যিনি ইতিমধ্যেই মথুরার এই ফাঁসির মঞ্চ পরিদর্শনে গিয়েছেন। প্রশাসনিক ভাবে জানানো হয়েছে এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি ফাঁসির দিন তবে খুব শীঘ্রই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের নতুন পাতা রচনা হতে চলেছে।
উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার হাসানপুর এলাকার বাওয়ানখেদি গ্রামে বসবাসরত শিক্ষক শওকত আলীর একমাত্র কন্যা শবনম যাকে নিজের সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা লাভ করতে সাহায্য করেছিলেন তার বাবা। পাশাপাশি স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পর স্কুলে শিক্ষকতা করতেন শবনম। সুখের সংসারে হঠাৎই এক ঝড় ওঠে , শবনম গ্রামেরই এক ছেলে সেলিমের সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পরেন, পরিবারের দিক থেকে এই সম্পর্ক মানতে নারাজ থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবারের সকলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেখা করতে যেতেন তিনি । পরবর্তীতে অবস্থা হাতের বাইরে যেতে দেখে পরিবারের সকলকে প্রেমিকের সঙ্গে পরামর্শ করে খুন করেন শবনম। যদিও প্রাথমিকভাবে গ্রামের সকলেই জানতেন দুষ্কৃতীরা খুন করেছেন। তবে পুলিশের সন্দেহ গিয়ে দাঁড়ায় শবনমের উপর, এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় তার প্রেমিক সেলিমকেও। ঘটনার জেরা করার সমস্ত দায় স্বীকার করে নিয়েছেন তারা। সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসি বহাল রাখা হয়েছিল শবনমের । তবে প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হয়ে গেলে এখন দিন নির্নয়ের পালা।
তৃতীয় বিশ্বের দেশ বা বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য দেশের ইতিহাসটা একবার ঘেঁটে দেখলে দেখতে পাওয়া যাবে ভারতে এমন একটি দেশ যেখানে সব থেকে বেশি ফাঁসির আসামিদের প্রাণ ভিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রধানত ফাঁসির আসামিদের কয়েকটি বিশেষ কারণে ফাঁসি মুলতবি থেকে যায় । যেমন কখনও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়ে তাতে রাষ্ট্রপতি সহমত থাকায়, কখনো ঘটনাচক্রে নির্ধারিত সময় পার হয়ে গিয়ে ,আবার কখনো এমনও দেখা যায় ফাঁসির জন্য নির্ধারিত দড়ি ছিঁড়ে পড়ে গিয়ে ফাঁসি মুলতবি রাখা হয়েছে। তবে শবনমের ক্ষেত্রে এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি। ওদিকে বিহারের বক্সার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ফাঁসির দড়ি। এখনো পর্যন্ত আশা করা যাচ্ছে শেষ মুহূর্তে কোন বিশেষ পরিবর্তন না হলে শবনমই হতে চলেছেন ভারতের প্রথম মহিলা আসামি যাকে ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।