করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে বেসামাল করে দিয়েছে গোটা দেশকে। টলমল অবস্থা দেশজুড়ে। মৃত্যুমিছিল বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। হাসপাতালে নেই বেড, নেই অক্সিজেন। এ যেন দুঃস্বপ্নের মতন ভয়াবহ কোনো হরর ফিল্মের সিন। যেন চোখ থেকে থ্রিডি চশমাটা খুলে ফেললেই নিমেষে মুছে যাবে সব অমঙ্গল। কিন্তু নাহ, বাস্তবটা অতটাও সোজা নয়। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সত্যিই কেউ জানিনা আর কতক্ষণ সুস্থ থাকতে পারব।সারাক্ষণ একটাই আশঙ্কা একটাই ভয়, মৃত্যুমিছিলের পরবর্তী নামটা নিজের বা নিজের কোনো প্রিয়জনের হবেনা তো! চারিদিকে শুধুই কান্না, শুধুই হাহাকার। ভারত জুড়ে প্রতিটি প্রান্তে এখন শুধুই ধূসর শোক। ছাইয়ের স্তুপে চাপা পড়েছে যা কিছু ভালো, যা কিছু শুভ।

অনেকেই হয়তবা বাড়িতে প্রিয়জনদের সাথে থাকার সুযোগ টুকু পাচ্ছেন এই কঠিন সময়ে। কিন্তু অনেকের ভাগ্যটা অতটাও ভালো নয়। পড়াশোনা, চাকরি, কাজ ইত্যাদির সূত্রে বাইরে থাকেন অজস্র মানুষ, পরিবারের থেকে অনেকটা দূরে।তাঁদের বেশিরভাগই এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন বাইরে। সেই পরবাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, একবার শেষ দেখাটুকুর সুযোগও জোটেনি পরিবারকে, প্রিয়জনদের… এমন উদাহরণও কম নয়। যাঁরা এখনও লড়ছেন তাঁরা জানেন কতটা কঠিন এই অসম লড়াইটাকে একা লড়া। যুদ্ধক্ষেত্রটা নিমেষেই অনেকখানি সোজা হয়ে যায়, যদি পরিবার পাশে থাকে,হাতে হাত রেখে যুদ্ধটা লড়া হয় একসাথে।
এই মুহুর্তে ভালো থাকার এই একটাই অস্ত্র। সাথে থাকা, সাথে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য, ভালো থাকার জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদরা।
▪️পজেটিভ থাকুন,পজেটিভ বলুন:
এই অবস্থায় সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়া, খবর এসবের মধ্যেই ডুবে রয়েছি আমরা। হারিয়ে ফেলছি নিজের মনোবল। প্রতিমুহূর্তে আতঙ্ক যেন ঘিরে ধরছে চারিদিক থেকে। কিন্তু ভয় পাওয়াটা তো কোনো সমাধান হতে পারেনা তাইনা? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ৮৫% ক্ষেত্রেই করোনা সারছে বাড়িতে থেকেই। তাই আতঙ্কিত হবেন না। প্রিয়জনদের সাথে থাকুন। অবসরে গল্প করুন,আড্ডা দিন। খুশি থাকতে চেষ্টা করুন।পরিবারের সঙ্গে পজেটিভ কথা আলোচনা করুন।ভবিষ্যতের প্ল্যানিং করুন। সঙ্গীর সাথে রোম্যান্টিক সময় কাটান। পরিবারকে সময় দিন।

▪️ ঝগড়া নয়:
গত একবছর ধরে বাড়িতে থেকেই কাজ করছেন বিশাল সংখ্যক মানুষ। চোখের সামনে ২৪ঘন্টা স্বামী,স্ত্রী,পরিবারের লোকজনদের দেখে দেখে বাড়ছে বিরক্তি, বাড়ছে একঘেয়েমি। এই একঘেয়েমি বা বিরক্তিই জন্ম দিচ্ছে দাম্পত্য কলহ,ডিভোর্সের মত সমস্যাগুলিকে। একটা কথা মাথায় রাখুন, এটা ঝগড়া করার সময় নয়। নিজের মাথা গরম হলেও উল্টোদিকের মানুষটাকে যা খুশি তাই বলে দেওয়ার আগে ভাবুন একটাবার, কী পরিস্থিতিতে আছেন তিনি, কেমন গেছে তাঁর সারাটা দিন। নিজের কাছের মানুষদের বুঝতে চেষ্টা করুন। পাশে থাকুন, সাপোর্ট দিন। মনে রাখবেন যে পরিস্থিতিই আসুক, আপনার পাশে কিন্তু আপনার প্রিয়জনরাই থাকবেন।
▪️সাহায্য করুন:
পরিবারের কোনও সদস্য সমস্যায় পড়লে সেখানে অন্যরা কেউ এগিয়ে না আসলেও আপনি অবশ্যই যান। জিগ্গেস করুন তাঁদের কেমন সাহায্য দরকার। সেই মতো তাঁদের সাহায্য করুন। বাড়ির মহিলাদের বাড়ির বা রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করতে চেষ্টা করুন। নিজেও কখনও কখনও উপযাচক হয়ে করতে চান কোনো কাজ।
▪️সারপ্রাইজ দিন:
পরিবারের মানুষদের বিশেষ দিনে ছোটো-ছোটো সারপ্রাইজ দিতে চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে তাঁর পছন্দের কোনো খাবার বানানো,কিংবা ছোট্টো কোনো মেসেজ বা চিঠি। সময়টা সত্যিই সহজ নয়। সত্যিই কেউ জানিনা কাল অবধিও বেঁচে থাকব কিনা। কোভিড এসে ‘আইসোলেট’ করে দেওয়ার আগের সময়টুকুতেই নাহয়, আসুননা, একটু বেঁধে বেঁধে থাকি।