রাজ্যে টানা বৃষ্টি ও ড্যাম থেকে ছাড়া অতিরিক্ত জলে বন্যা কবলিত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। মঙ্গলবার হাওড়ার আমতার বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন বন্যাদুর্গতদের দুরবস্থার কথা।এছাড়াও হাওড়া উদয়নারায়নপুর ও হুগলির খানাকুল অঞ্চলেও যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। খারাপ আবহাওয়ার জন্য সম্ভব হয়নি যাওয়া। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি দেখেই উদ্বিগ্ন মমতা ফোনের পাশাপাশি চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।বর্তমানে রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তড়িঘড়ি ডিভিসি জল ছাড়া বন্ধ করতে বলল রাজ্যের সেচ দপ্তর। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ফিরে উদ্বিগ্ন মমতা রীতিমতো কড়া চিঠি লিখলেন মোদিকে। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, পাঞ্চেত, মাইথন ও তেনুঘট ব্যারেজ থেকে বিপুল পরিমান জল ছাড়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দু’লাখ কিউসেক জল ছেড়েছে এই ৩ ব্যারেজ। আর তার ফলস্বরূপ রাজ্যে বন্যা হয়েছে তা একপ্রকার ‘ম্যানমেড’ বন্যা। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূমের একটি বড় অংশ বন্যায কবলিত।

চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর আরও লিখেছেন যে, ইতিমধ্যেই বন্যায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি জলে ডুবে গিয়েছে। বহু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এখনো দুবে রয়েছে জলে। বছরের-পর-বছর ডিভিসি এমন ভাবেই জল ছেড়ে বন্যা তৈরি করছে। ২০১৫ সালের পর ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২১ সালে ডিভিসি জল ছাড়ার ফলে এই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। বহুদিন ধরে ডিভিসির সংস্কার না হওয়ার কারণেই একটু জল হলেই জল ছেড়ে দিচ্ছে ডিভিসি। এই পরিস্থিতিতে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে ডিভিসির। তা না হলে এই জল যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবার অন্য কোন উপায় নেই।আবহাওয়া খারাপ থাকায় মঙ্গলবার সড়কপথে হাওড়া আমতায় পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বলেন বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে এবং সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গেছেন তিনি। কিভাবে উদ্ধারকার্য চলছে, চাইনিজ শিবিরের কত জনকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে, এই সমস্ত কিছু তথ্য নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

” এটা বৃষ্টির বন্যা নয়। এটার জল ছাড়ার বন্যা। ম্যান মেড ফ্লাড। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, ডিভিসি ইচ্ছে মতো জল ছাড়ছে। এটা কেন্দ্রের ডিভিসির খাল সংস্কারর না করার ফল। এখনো দেখছেন বাজ পড়ছে। আপনারা সাবধানে থাকুন।” বন্যা বিধ্বস্ত আমতায় গিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী।রাজ্য সরকারের তরফে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১,১৩,১৮১ জন মানুষকে সরানো হয়েছে। ত্রাণশিবিরে রয়েছেন ৪৩,১৯২ জন। মারা গিয়েছেন ২৩ জন। দেওয়াল ভেঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের, জলে ডুবে মৃত্যু ৭জনের, বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬জনের, তড়িৎ আহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২জনের। বন্যার কবলে প্রায় চার লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।