২০২১-এর নবান্ন দখলের যে স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল তা আপাতত অধরায় থেকে গিয়েছে। ২০০ আসন দখলের স্বপ্ন দেখে শেষমেষ ৭৭-এই থামতে হয় বিজেপিকে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, তৃণমূলের মত শক্তিশালী দলীয় সংগঠন না থাকায় বিজেপি পর্যদুস্ত। এমনকি ভোটের সময় বিজেপির দুর্বল সংগঠন নিয়ে সমালোচনা করেছে তৃণমূলও। শুক্রবার রাজ্য বিজেপির দুর্বল সংগঠনের কথায় যেন এবার প্রকারান্তরে মেনে নিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নতুন রাজ্য সভাপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুকান্ত মজুমদারের কাছেই এই বিষয়ে আর্জিও জানান শুভেন্দু। পূর্বেও এমন আত্মসমালোচনা হয়েছে বিজেপি-তে। কিন্তু কোনও প্রকাশ্য সভায় এই ভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দোষারোপ করেনি কেউ।
শুক্রবার শুভেন্দু নিজের যুক্তির সমর্থনে পরিসংখ্যানও পেশ করেন। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি-র সমর্থনের কোনও কমতি নেই। ৩৮.১৩ শতাংশ ভোট পেলে কেন্দ্রে সরকার গড়া যায়। কিন্তু এখানে আমরা এত ভোট পাওয়ার পরেও বিধায়ক সংখ্যা বাড়াতে পারিনি কারণ, অন্য দিকে ৪৭ শতাংশের বেশি ভোট একত্রিত হয়েছে।” এর পরে তিনি আরও বলেন, “রাজ্যে ৭৭ হাজার বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার বুথে কমিটি তৈরি করা খুব কঠিন। কিন্তু বাকি জায়গায় যদি আমরা বুথ কমিটি তৈরি করতে না পারি, বুথ সংগঠন তৈরি করতে না পারি তা হলে আমরা একটা বড় অংশের আসনে জিতব কিন্তু সরকারে যেতে পারব না।” শুভেন্দু বিজেপি কর্মীদের এও বোঝান যে গণতন্ত্রে ৫১ মানে একশো আর ৪৯ মানে শূন্য অর্থাৎ গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই শেষ কথা।
যাঁরা রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে এই আশায় গেরুয়া শিবিরে এসেছিলেন তাঁদের নিয়েও হতাশ শুভেন্দু। নির্বাচনের আগে অন্য রাজনৈতিক দল ভেঙে বিজেপি ঠিক করেনি বলে আগেই সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মহল। শুক্রবার প্রায় সেটাও স্বীকার করে নিয়ে শুভেন্দু দাবি করেন, বিজেপি-তে তিন ধরনের কর্মী ও নেতা রয়েছেন। এক দল আদর্শগত কারণে যারা প্রথম থেকেই দলে রয়েছেন। এক দল বিজেপি সরকার গড়বে ভেবে হুজুগে ও স্বার্থসিদ্ধির আশায় নাম লিখিয়েছিলেন। আর এক দল নৈতিক কারণে লড়াই করার জন্য সব স্বার্থ ছেড়ে দলে এসেছেন। তাঁর কথায়, “আর এক দল বিনা স্বার্থে মনে করেছেন নরেন্দ্র মোদীই সঠিক নেতা, বিজেপি-ই সঠিক মঞ্চ। ওই খানে যাই, বাংলাকে বাঁচাই। ওই দলে আমি পড়ি।” এই প্রসঙ্গে মুকুল রায়ের নাম টেনে শুভেন্দু বলেন, তৃণমূল সব কেড়ে নেওয়ার পরে বিজেপি-তে আশ্রয় নিয়েছিলেন মুকুল। আর তিনি তিন দফতরের মন্ত্রিত্ব-সহ অনেক পদ ছেড়ে বিজেপি করতে এসেছেন। এরপরেই দলত্যাগীদের নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, “এক দল মানুষ বিজেপি সরকার গড়বে ভেবে নাম লিখিয়েছিলেন। বিজেপি সরকার গড়েনি তাই পালাই বলছেন এখন।” এরপর নতুন রাজ্য সভাপতির কাঁধে সংগঠন জোরদার করার দায়িত্বও তুলে দেন শুভেন্দু।