নিজস্ব সংবাদদাতা ,পুর্ব মেদিনীপুর : ” ইয়ারো নে মেরে ওয়াস্তে কেয়া কুছ নেহি কিয়া! ” এই পাঞ্জাবী গানের বাস্তব উদাহরণ মেদিনীপুরের অরুনাভ। হ্যাঁ, প্রতিদিনের আর্থিক অনটনকে তোয়াক্কা না করেই শিক্ষার বাতিতে তেল ঢালছে পূর্ব মেদিনীপুরের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। একদিকে পারিবারিক আর্থিক অনটন, অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের রোজকার প্রায় বন্ধের দিকে । এই দু’য়ের গেরোয় সংসারের ভবিষ্যত যখন প্রশ্নের মুখে, ঠিক সেই পরিস্থিতিতে শিক্ষার সঙ্গে কোন রূপ আপোষ না করে অন্ধকার থেকে আলোর পথের লক্ষ্যে নীরবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর থানার মঙ্গলপুর গ্রামের বাসিন্দা অরুণাভ গিরি।
অরুনাভ ২০২০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করে, কিন্তু বাড়িতে আর্থিক অভাব বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর আগামী দিনের পড়াশোনায়। বাড়ি থেকে অরুণাভকে জানিয়ে দেওয়া হয় পড়াশোনার খরচ দিতে পারবে না বাড়ি থেকে। কিন্তু কোনো কিছুকেই পরোয়া না করে নিজের কাঁধেই সব দায়িত্ব তুলে নেয় অরুণাভ।রামনগর থানার “গোবরা আই এন কে এম হাই স্কুল” থেকে পাস করে অরুণাভ।
করোনা আবহে লকডাউনের সময় কাজ না থাকায় আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে তাঁর পরিবারও, এরপর বাড়ি থেকে অরুণাভকে জানিয়ে দেওয়া হয় পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবেন না তাঁর বাবা, তারপর অরুনাভ পরিবারের সহযোগিতায় শুরু করে দেয় দীঘা সমুদ্রের পাড়ে মশলা মুড়ি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের ব্যবসা। বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন বিকালে সমুদ্রের পাড়ে এসে শুরু করে এই ব্যবসা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই ব্যবসা থেকে প্রতিদিন যা রোজগার হয় তা দিয়ে নিজের পড়ার খরচ, এবং পাশাপাশি ছোট একটি ভাইয়েরও পড়ার খরচ চালিয়ে নিতে পারে সে। এবং তাঁর পরেও যেটুকু টাকা বাঁচে তা তুলে দেয় পরিবারের হাতে। অরুনাভের এই কষ্টের সময় মাঝে মাঝে এসে কাজে সহযোগিতা করে তাঁর বন্ধুরা। এভাবেই আপাতত নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিচ্ছে অরুণাভ কিন্তু ভবিষ্যতে যদি না সরকারি বা কোনো শুভানুধ্যায়ী মানুষ অরুণাভকে সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো অকালেই পড়া ছাড়তে হতে পারে অরুনাভকে। সে কথা ভেবেই দুশ্চিন্তায় রয়েছে অরুণাভ। শুধু সে নয়, পাশাপাশি তাঁর বন্ধুরাও অরুণাভর সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে।