পয়লা বৈশাখ থেকেই সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল বাংলার রাজভবনের দরজা। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উদ্যোগে এবং কলকাতা মিউজিয়ামের সহযোগিতায় রাজভবনে চালু হল জন সাধারণের ‘হেরিটেজ ওয়াক’। সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পর্যটনকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমদিন রাজভবন ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন ২৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে রাজভবনের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এই হেরিটেজ ওয়াকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ রাজভবনের বিখ্যাত চাইনিজ ক্যানন, কার্জন এলিভেটর, সরোবর, ১১ হাজার বই বিশিষ্ট লাইব্রেরি, রাজভবনের বিভিন্ন হল, বাগান ঘুরে দেখতে পারবেন দেখান। জাদুঘরের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্তরা আগত ব্যক্তিদের সমস্ত কিছু ঘুরিয়ে দেখাবেন।
রাজভবন সূত্রে খবর, শনি বা রবিবারের মধ্যে যে কোনও এক দিন এক ঘণ্টা করে রাজভবন ঘুরে দেখার সুযোগ দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে। সূত্রের খবর, একসঙ্গে ঢুকতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩০ জন। চাইলে গাইড নেওয়া যাবে। অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করে কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজে নিজেই ঘুরে দেখা যাবে। হেডফোনের মাধ্যমে নির্দেশ শুনে শুনে ঘুরে দেখতে হবে রাজভবন। কলকাতা মিউজিয়ামের ওয়েবসাইট থেকেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন ইচ্ছুকরা। খুব শীঘ্রই কলকাতা মিউজিয়ামের তরফে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নববর্ষের সন্ধ্যায় দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যাতেও এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সেখানেই বাংলাতে বক্তব্য পেশ করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বলেন, “উপস্থিত অতিথিগণ, শুভ নববর্ষ। আমি বাংলাকে ভালবাসি। আমি বাংলার মানুষকে ভালবাসি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা করি। সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্মান জানাই। আমি স্বামী বিবেকানন্দকে সম্মান করি, সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধা করি। বঙ্গভূমি আমার দ্বিতীয় বাসভূমি। আমি বাংলার বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে চাই। আমি বাংলার পুত্র রূপে পরিচিত হতে চাই। আমি আমার হৃদয়ে, রক্তে বাংলাকে স্বীকার করব। আমি পবিত্র বাংলার অঙ্গ হতে চাই। চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, জয় পশ্চিমবঙ্গ, জয় হিন্দ।”
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য হলেও, গোটাটাই স্পষ্ট বাংলায় অনর্গল বলে গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। প্রসঙ্গত, এর আগেও রাজ্যপালের মুখে টুকরো টুকরো বাংলা শোনা গিয়েছিল। তবে এবার একেবারে স্পষ্ট উচ্চারণে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলায় বলে গেলেন তিনি। বাংলার সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই বাংলার সঙ্গে একাত্ম্য হয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বার বার বুঝিয়েছেন রাজ্যপাল। এদিনও সেই বার্তাই যেন ফিরে ফিরে এল।