মেঘের কোলে সত্যিই যেন তন্দ্রা নেমে এল । চলে গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম প্লে ব্যাক গায়িকা গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় । তাঁর প্রয়ানে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট্য অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে উষা উত্থুপ এবং বহু বিশিষ্ট্য জনেরা । মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আজ রাতে পিস ওয়ার্ল্ডেই রাখা হবে বর্ষীয়ান এই শিল্পীর মরদেহ । ১২টার সময় দেহ নিয়ে রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে। ৫টা পর্যন্ত ওখানে থাকবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান গান স্যালুট দিয়ে সম্পন্ন হবে শেষকৃত্য ।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নানান ভাষায় গান গেয়ে শ্রোতাদের মনমুগ্ধ করেছেন । তাঁর গানের ছন্দে, তালে, সুরে, তাঁর কন্ঠে মজেছে আপামর বাঙালি । ছবির গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদী সঙ্গীতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। দূর থেকে ভেসে আসলেও, তাঁর গান শুনেই বোঝা যায় এই কণ্ঠের অধিকারীনী কে। এমন সফল মানুষ তবু তাঁর ব্যবহার ছিল অতি নম্র, স্নিগ্ধ । কণ্ঠের জন্য সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় চিরকালই ব্যতিক্রমী থেকেছেন। ছোট থেকেই গানের আবহে বড় হওয়া গীতশ্রীর। কিশোর বয়সেই মাত্র ১৪ বছরে এইচএমভি থেকে রেকর্ড বের হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। তখন থেকেই বাঙালির মনের মধ্যে একটা পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি । শচিন দেব বর্মণের হাত ধরেই পা রেখেছিলেন মুম্বাইয়ে । গেয়েছেন ১৭ টি হিন্দি ছবির প্লে ব্যাক । রাইচাঁদ বড়াল, শচীন দেব বর্মন থেকে শুরু করে সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সহ সেই সময়ের সমস্ত দিকপাল সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা চলচ্চিত্রে সূচিত্রা সেনের কন্ঠে তাঁর গান গাওয়ার সুযোগ এলে অগ্নিপরীক্ষা ছবিতে গানে মোর ইন্দ্রধনু গেয়ে ইতিহাস তৈরি করলেন গীতশ্রী। স্বর্ণযুগের গানের মধ্যে এই গান চিরতরে জায়গা করে নিল। সুচিত্রা সেনের লিপে তাঁর কণ্ঠ যেন মিলেমিশে একাকার হল।
তাঁর গানের মধ্যে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’,’এ শুধু গানের দিন’,’এই মধুরাত’ গানগুলো আজও বাঙালির কাছে রোমান্টিসিজমের সমার্থক। এক একটি কালজয়ী গান তাঁকে অমর করে রেখেছে সঙ্গীতের দুনিয়ায়। ১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৯সালে লাইফটাইম অ্য়াচিভমেন্টের জন্য ভারত নির্মান পুরস্কার পান। ২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মান পান তিনি। ২০২২ সালে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু এতদিন সে সম্মান তাঁকে না দেওয়ায় অভিমানে পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করেন তিনি।