দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে করোনা। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সাথে সাথেই সামনে এসেছে দেশের বেহাল পরিকাঠামো। প্রতিদিন কার্যতই মুড়ি মুড়কির মতন মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কী করছে সরকার? কেন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা সরকার এই ভয়াবহ মৃত্যুমিছিল? রাজধানী দিল্লির কথাই ধরা যাক। সংক্রমনের দ্বিতীয় সুনামি আছড়ে পড়ায় দিল্লি এখন মৃত্যুপুরী। প্রতি ঘন্টায় গড়ে জ্বলছে ১২ জন করোনায় মৃতের দেহ। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুর সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ তে। এখনও যাঁরা বেঁচে আছেন, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে,খুব সুখকর নয় তাঁদের অবস্থাও। অক্সিজেনের হাহাকার চারিদিকে। হাসপাতাল গুলোতে নেই অক্সিজেন, নেই পরিকাঠামো। মাত্র চারদিন আগেই, গঙ্গারাম হাসপাতালের পর দিল্লির জয়পুর হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে করতে মারা যান ২০জন করোনা রোগী। এই পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে আর দেহ সৎকারের জায়গাই নেই রাজধানী দিল্লিতে। পর্যাপ্ত দাহ করার কাঠ থেকে শুরু করে অন্ত্যেষ্টির লোকজন, অমিল সবই।
![](https://mbharat.in/wp-content/uploads/2021/04/WhatsApp-Image-2021-04-27-at-15.24.06-1.jpeg)
করোনার ভয়াবহতায় অবশ্য পিছিয়ে নেই বাংলাও। গত কয়েকমাস বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিকেয় উঠেছিল করোনা বিধি। মিটিং মিছিলের ভীড় দেখে ভয় পেয়ে করোনা ভাইরাস নিজেই যাবেনা সেখানে এমনটাই হয়ত ভেবেছিলেন রাজনৈতিক দল গুলির নেতা নেত্রীরা। চিকিৎসকদের প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচটা রাজ্য দখলের নেশায় এক্কেবারে গোহারা হারিয়ে দিলেন নেতা নেত্রীরা, এমনই বলতে শোনা যাচ্ছে রাজ্যের অনেককেই। প্রতিদিনই সামনে আসছে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাঁত বের করা জরাজীর্ণ হাল। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার তো আছেই। অভিযোগ উঠছে মৃতদেহ নিয়েও ব্যবসা চলছে এ রাজ্যে। করোনায় প্রিয়জনের মৃত্যু হলে শেষবারের জন্য প্রিয়জনের মুখদর্শন থেকে শুরু করে অস্থি সংগ্রহ সব কিছুর জন্যই মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে পরিবারকে। এতকিছুর পরেও মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাওয়া, সৎকার না করার মত ঘটনা লেগেই থাকছে নিত্যদিন। কিন্তু প্রশ্নটা হল এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও কী করছে সরকার? কেন নেওয়া হচ্ছেনা কোনো কড়া পদক্ষেপ? ভোট ভোট এবং সিংহাসন দখলের খেলা কি এখনও শেষ হয়নি রাজ্যে? কেন বসানো হচ্ছেনা অক্সিজেন ফ্যাক্টরি? বিভিন্ন স্টিল প্ল্যান্ট থেকে আসা বিপুল পরিমান অক্সিজেনই বা যাচ্ছে কোথায়? গত কয়েকদিন ধরে অক্সিজেনের হদিস দিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়েছে কয়েকশো ফোন নাম্বার। সেই সমস্ত নাম্বার থেকে দরকারের সময় সাহায্য পাচ্ছেন জনগন বলেই।খবর। তাহলে এই সমস্ত অক্সিজেনের সোর্সের খবর কেন নেই রাজ্য সরকারের কাছে?
গতবছর ২০২০ সালেই করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রকাশ্যে এসেছিল দেশের বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। প্রশাসন খুব ভালো করেই জানত এই পরিকাঠামো নিয়ে সামলানো সম্ভব নয় দ্বিতীয় ধাক্কা। তাহলে একটা বছর সময় পেয়েও কেন নেওয়া হলনা কোনো পদক্ষেপ? সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগেই কেন ছাড় দেওয়া হল মহামারী আইন কিংবা করোনা বিধিতে?মানুষের জীবনের থেকেও কি ক্ষমতা দখলের মূল্য বেশি? উঠছে এই প্রশ্নই।