আইএএস কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট জলমগ্ন হয়ে মৃত্যু তিন পড়ুয়ার। শনিবার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির ওল্ড রাজেন্দ্রনগরে। জানা গেছে, এই ঘটনায় আইএএস কোচিং সেন্টারের মালিক ও সমন্বয়কারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত থেকেই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আইএএস পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন রয়েছে আধা সামরিক বাহিনী ।
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল থেকে দিল্লিতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যা থেকে রাস্তায় জল জমতে শুরু করে। সেই জলই ওই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে ঢুকে দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজেন্দ্র নগরে ওই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে গ্রন্থাগার রয়েছে। গতকাল সেই গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করছিলেন জনা কুড়ি পড়ুয়া। বাকিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলেও মৃত ৩ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
এই প্রসঙ্গে, মধ্য দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার এম হর্ষবর্ধন বলেন, এই ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুলিশ আরও জানিয়েছে, মৃতরা হলেন, উত্তর প্রদেশের শ্রেয়া যাদব, তেলাঙ্গানার তানিয়া সোনি, কেরলের নিভিন দালউইনরা। কেরলের এরনাকুলামের বাসিন্দা নিভিন। তিনি জেএনইউ-এর পিএইচডির পড়ুয়া বলেই খবর। তবে মর্মান্তিক এই ঘটনায় রাজনৈতিক ‘রং’ লাগতেও সময় লাগেনি। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে আপ-বিজেপির বাকযুদ্ধ।
এদিন বিজেপি নেতা ভি মুরলীধরন কটাক্ষ করে বলেন, দিল্লি পুরনিগম আপের দখলে। এই ঘটনার মাধ্যমে দিল্লি প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রকাশ্যে এসে গেছে। দিল্লির বিজেপি প্রধান বীরেন্দ্র সচদেব অতিশী ও স্থানীয় আপ বিধায়ক দুর্গেশ পাঠককে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার দুর্গেশ পাঠককে আবেদন করলেও সুরাহা মেলেনি। তিনি ‘ডোন্ট কেয়ার’ অ্যাটিটিউড দেখিয়েছেন। দুর্ঘটনার জন্য দিল্লি সরকারের অবহেলাই দায়ী। এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দেয় আপ কর্তৃপক্ষ। আপের দাবি, বছর দেড়েক আগে দিল্লি পুরনিগম দখল করেছে আপ। তার আগে ১৫ বছর দিল্লি পুরনিগম চালিয়েছে বিজেপি। দুর্গেশ পাঠক প্রশ্ন তোলেন, ওই ১৫ বছরে কী করেছে বিজেপি? পাঠক বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে এই এলাকার কাউন্সিলর বিজেপির। কেন ড্রেন তৈরি করা হয়নি? আর এক বছরে সব ড্রেন তৈরি করা যায় না। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়।”
বিজেপি-আপের তরজার মধ্যে ৩ আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুতে সরব হয়েছে কংগ্রেস। পবন খেরা এই দুর্ঘটনাকে ‘ম্যান মেড’ বলে তকমা দিয়েছেন। কীভাবে একটা কোচিং সেন্টার বেসমেন্টে চলে? তুলেছেন প্রশ্ন। এদিন আপ-বিজেপি বাকযুদ্ধ নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। বলেন, পরস্পরের দিকে আঙুল তোলা সহজ। কিন্তু, সাধারণ মানুষ এর জন্য ভুগছেন।”
এদিকে এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধি বলেন, দিল্লিতে একটি বাড়ির বেসমেন্ট জলমগ্ন হয়ে পড়ার কারণে পড়ুয়াদের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। কয়েকদিন আগে বৃষ্টিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। শোকাহত পরিবারের প্রতি আমি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। পরিকাঠামোর এমন ধস আসলে সিস্টেমের যৌথ ব্যর্থতা। নিরাপদ ও সুখকর জীবন প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং সরকারের দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী। ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের কঠোর শাস্তির আর্জি জানিয়েছেন তারা।